নানা আয়োজনে আজ পালন করা হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস
আজ রোববার ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে—‘অনলি ওয়ান আর্থ : লিভিং সাস্টেইনেবিলি ইন হারমনি উইথ নেচার’। যার ভাবানুবাদ—‘একটাই পৃথিবী : প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন’।
বাংলাদেশে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—‘বৃক্ষ-প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ’।
এ বিষয়ে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের একমাত্র এই পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে, সব ধরনের প্রাণীকে বাঁচাতে হবে, অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।’
দিবসটি উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সব মোবাইল ফোন অপারেটরের মাধ্যমে খুদেবার্তা প্রেরণ ও ওয়েলকাম টিউন সংযোজন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, স্লোগান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশ বিষয়ক সেমিনার, রাউন্ড টেবিল আলোচনা, পরিবেশ সচেতনতামূলক কার্যক্রম, পরিবেশ অধিদপ্তর সম্পর্কিত বুকলেটের পরিমার্জিত সংস্করণ প্রণয়ন ও প্রকাশ, ইটিপিবিহীন ও দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের জন্য সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে পরিবেশমেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়েছে।
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন হতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন এবং একই সঙ্গে ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশমেলা এবং ৫ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২২ এর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
পরিবেশ মন্তণালয় এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, পরিবেশ দুষণের অন্যতম প্রধান কারণ শিল্পকারখানা কর্তৃক সৃষ্ট দূষণ রোধকল্পে পরিবেশ অধিদপ্তর সীমিত জনবল নিয়েও শিল্পকারখানাগুলো নিয়মিত মনিটর করছে এবং দুষণকারী শিল্প কারখানাগুলোকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
এদিকে, ইটভাটা সৃষ্ট দুষ্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি জমির উর্বর মাটি রক্ষার লক্ষ্যে সরকার ‘হট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)’ জারি করেছে। এ আইন বাস্তবায়ন ও পোড়ানো ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা করেছে। এ ছাড়া বায়ুদূষণকারী অবৈধ কারখানা ও অপরিকল্পিত নির্মাণ কার্যক্রম, কালো ধোঁয়া নির্গমণকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ও মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এ ছাড়া বর্তমানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বন অধিদপ্তর প্রায় সাত হাজার ২২০ হেক্টর সমতল ভূমি ও শাল বন পুনরুদ্ধার, এক লাখ ৩০ হাজার ৫৮০ হেক্টর পাহাড়ি বন পুনরুদ্ধার, ৫০০ হেক্টর আগর বন, ১৫ হাজার কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান, ৫০ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগানসহ অন্যান্য বাগান সৃজন করা হবে। এ পর্যন্ত সামাজিক বনায়নের আবর্তকাল উত্তীর্ণ গাছ আহরণ করে দুই লাখ ২২ হাজার ৯৯৪ জন উপকারভোগীর মধ্যে ৪১১ কোটি ৫২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা লভ্যাংশ হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। ২০০৯ হতে ২১ আর্থিক সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্প এবং রাজস্ব বাজেটের আওতায় ম্যানগ্রোভসহ এক লাখ ৬৩ হাজার ৩৭৮ হেক্টর ব্লক, ২৬ হাজার ৪৫৩ সিডলিং কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান সৃজন এবং বিক্রয় বিতরণের ১০ কোটি ৫৯ লাখ চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়।
পরিবেশমন্ত্রী জানান, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণসহ সব দূষণ নিয়ন্ত্রণেই সরকার কাজ করছে। শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র বা ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) অনলাইন ব্যবস্থাপনার আওতায় আসছে বলে তিনি জানান। নতুন বিধিমালা তৈরি হচ্ছে। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণে সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।