নাসিক নির্বাচনে নৌকার মাঝি ভাতিজি, হাতির মাহুত চাচা
আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র,সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আজ মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
আজ সকাল থেকেই রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রতীক নেওয়ার জন্য প্রার্থী ও সমর্থকরা ভিড় করতে থাকেন।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর দলীয় প্রতীক নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন হাতি প্রতীক।
প্রতীক পাওয়ারপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিজ নিজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
নৌকার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন,প্রতিটা নির্বাচনই চ্যালেঞ্জিং, এ নির্বাচনও তার বাইরে কিছু না। দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে বিগত বছরগুলোতে মানুষকে সেবা দিয়েছি। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সততার সঙ্গে নগরীর রাস্তা, ড্রেনেজসহ সব ধরনের উন্নয়ন করা হয়েছে সরকারি অর্থায়নে। জনসাধারণ এবার আবার আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব।
গত তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারও কোনো ঝামেলা হবে না। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে, সেই বিজয়ী হয়ে আসবে। তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘১৬ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে, তারপরও আমাদের এ শহরেই বসবাস করতে হবে। সুতরাং আমরা এমন কিছু করব না, যাতে নারায়ণগঞ্জের মান ক্ষুণ্ন হয়। আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করব, আমরা সহনশীলতার সঙ্গে নির্বাচন করব।’
শামীম ওসমানের সহযোগিতা চাইবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, তিনি তাঁর বড় ভাই, সাংসদ। তিনি এমনিতেই সরাসরি প্রচারণায় আসতে পারবেন না। কিন্তু তিনিও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী। মান অভিমান থাকতেই পারে। একটা দলের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। তবে তিনি নৌকার বাইরে যাবেন না বলে আশা করেন। তিনি শামীম ওসমানসহ তার চাচা তৈমূর আলম খন্দকারের কাছে ভোট চাইবেন বলেও জানান।
অপর দিকে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন,আমি কেন নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি? কী পরিস্থিতিতে আমাকে নির্বাচনে দাঁড়াতে হয়েছে? জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতির সঙ্গে জড়িতে থেকেও নারায়ণগঞ্জবাসীর একটা দায়-দায়িত্ব পালন করতে হয়।নারয়ণগঞ্জবাসীর চাহিদার কারণে আমাকে এখানে নির্বাচন করতে হচ্ছে।দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আমার পাশে আছে। সবাইকে ধন্যবাদ’
বিএনপির প্রার্থী হয়ে আপনি দাঁড়াননি, আপনাকে দাঁড় করিয়েছেন শামীম ওসমান—এমন এক প্রশ্নে জবাবে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘আল্লাহ পাকের মেহের বানীতে বিগত ৫০ বছর শামীম ওসমান, প্রশাসনসহ সবার সাথে যুদ্ধ করেই আমি এখানে জনগণের মন জয় করেছি।’
শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকেবেন কি না, এমন এক প্রশ্নে জবাবে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, এর আগে আমি দলের প্রার্থী ছিলাম, দলের নির্দেশে আমাকে বসে যেতে হয়েছে। এবার আমি কোনো দলের প্রার্থী নই, এবার আমি জনগণের প্রার্থী, জনতার প্রার্থী।’
তৈমুর আলম অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ও সরকারদলীয় প্রার্থীকে নিয়ে সাংসদেরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সমাবেশ করছেন। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের উপস্থিতিতে ওই সমাবেশে মাইক ব্যবহার করা হয়েছে। অনুমতি নেওয়া ছাড়া মাঠে সমাবেশ করা হয়েছে। প্রশাসন এ ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
অন্যদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র পদপ্রার্থী মাওলানা মাসুম বিল্লাহ দলীয় প্রতীক হাত পাখা পেয়েছেন। মেয়র পদে মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রতীক বরাদ্দের পর নগরীতে প্রার্থী ও সমর্থকদের উৎসব শুরু হয়। আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।