নিপুণ আক্তারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন, শুনানি ১৩ মার্চ
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে স্থিতাবস্থার আদেশের পরেও সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসায় নিপুণ আক্তারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেছেন জায়েদ খান। আজ মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের আদালতে জায়েদ খানের আবেদনের শুনানি হয়। আদালত শুনানি শেষে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে রোববার শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।
আদালতে জায়েদ খানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি।
গত ৬ মার্চ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে অভিনেত্রী নিপুণ আক্তারকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। তবে এ সময়ে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান থাকবে বলে ওই পদের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আদালত। আগামী ৪ এপ্রিল এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। চেম্বার আদালতের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
শুনানিতে নিপুণের আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, মাই লর্ড, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদ পদ নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন প্রাথমিক ফলাফলে জায়েদ খানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করা হয়। টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগে ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ড জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে। কিন্তু প্রতিপক্ষ রিট করলে হাইকোর্ট রায় প্রদান করেন। আমরা রায় স্টে চেয়ে আবেদন করেছি। এ বিষয়ে যথাযথ যুক্তি আমরা তুলে ধরবো।
অপরদিকে জায়েদ খানের আইনজীবী আহসানুল করিম আদালতকে বলেন, হাইকোর্ট রুল শুনানি করে রায় দিয়েছেন। রায়ের পর আমি পদে বসে কাজ করে যাচ্ছি। এখন হাইকোর্টের রায় স্টে দিলে তা সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে।
জবাবে আদালত বলেন, তাহলে আপনি পদে থেকে দায়িত্ব পালন করে যান। তবে আমরা হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দিচ্ছি। একইসাথে পদে স্থিতাবস্থা দিচ্ছি। এ সময় জায়েদ খানের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, মাই লর্ড প্রতিপক্ষ এ আদেশের সুযোগ নিয়ে পদে বসার চেষ্টা করবে এবং আমাদের সাথে ঝামেলা তৈরি করবে।
জবাবে চেম্বার আদালতের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আদালতের হাত অনেক লম্বা। এ ধরনের কোন কাজ করলে আপনারা কনটেম্প করবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব। পরে আদালত আজ শুনানি শেষে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে অভিনেত্রী নিপুণ আক্তারকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। তবে এ সময়ে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান থাকবে বলে ওই পদের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আদালত।
রায়ের পর নিপুণ আক্তার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আদেশে আমি খুশি, চেয়ারে বসা বড় বিষয় নয়, আমরা এসেছি ন্যায়বিচারের জন্য, মহামান্য আদালত আমাদের ন্যায়বিচার দিয়েছেন, এতে আমরা খুশি।'
অপরদিকে জায়েদ খানের আইনজীবী আহসানুল করিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্পের সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণ আক্তারকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। তবে এ সময়ে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান বসতে বাধা নেই। এ সময় পর্যন্ত আদালত স্থিতাবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত বুধবার এ সংক্রান্ত রুলের ওপর তৃতীয় দিনের শুনানি শেষে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে নিপুণ আক্তারকে চলচ্চিত্র শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণাকে অবৈধ বলে রায় দেন। ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন নিপুণ আক্তার। আজ শুনানি শেষে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে অভিনেত্রী নিপুণ আক্তারকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। তবে এ সময়ে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান থাকবে বলে ওই পদের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আদালত।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আংশিক শুনানি শেষে গতকাল পুনরায় শুনানি শুরু হয়।
এর আগে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, এ মর্মে জারি করা রুল শুনানির এ দিন ধার্য করা হয়।
গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। নিপুণ আক্তার পান ১৬৩ ভোট। এরপর টাকা দিয়ে ভোট কেনাসহ একাধিক অভিযোগ আনেন নিপুণ। পরে জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ডে আবেদন করেন নিপুণ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে করণীয় জানতে আবেদন করেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে আপিল বোর্ডকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি অর্থের বিনিময়ে ভোট কেনার দায়ে বিজয়ী প্রার্থী জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান। একই সঙ্গে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেন।
আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন জায়েদ খান। ৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এক সপ্তাহের রুল জারি করেন আদালত। পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন নিপুণ। ৯ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে স্থিতাবস্থা জারি করেন চেম্বার আদালত।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদে স্থিতাবস্থাও বহাল রাখা হয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে জারি করা রুল হাইকোর্টকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আদালত। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।