কবর থেকে মাকে তুলে লেপ-কাঁথায় ঢেকে রাখল ছেলে
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মোথাজুরী এলাকায় চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৩ নভেম্বর) মধ্যরাতে পারিবারিক কবরস্থান থেকে নিজের মায়ের মরদেহ তুলে এনে ঘরে মশারি টানিয়ে লেপ-কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখে ছেলে সজিব হোসেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এলাকাবাসী, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মোথাজুরী এলাকার খোদেজা বেগম স্বামী আনতাজ আলীর মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে সজিবকে নিয়ে বসবাস করছিলেন। বাবা না থাকার সুযোগে সজিব ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তিনি প্রায়ই মায়ের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। গত শনিবার দুপুরে মা-ছেলের মধ্যে তীব্র বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে অভিমান ও মানসিক যন্ত্রণায় খোদেজা বেগম গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার সন্ধ্যায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
কিন্তু মধ্যরাতে সজিব গোপনে কবর খুঁড়ে মরদেহ তুলে নিজ ঘরে নিয়ে আসে। সেখানে মশারি টানিয়ে লেপ-কাঁথা দিয়ে মরদেহ ঢেকে রাখে। সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে কবরস্থানে গিয়ে কবর খোলা দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। পরে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সজিব ঘর বন্ধ করে রেখেছে এবং তার আচরণেও অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সজিবের ঘরের তালা ভাঙা হয়। ঘরের ভেতর মশারির নিচে লেপ-কাঁথায় মোড়া অবস্থায় পাওয়া যায় খোদেজা বেগমের মরদেহ। মরদেহ থেকে তখন প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল।
এর আগের রাতে সজিব তার মামা আব্দুল মান্নান মিয়াকে ফোন দিয়ে ‘মাকে কেনো দাফন করা হলো’-এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দাফনকাজে অংশ নেওয়া স্বজনদের প্রাণনাশের হুমকি দেন। এতে পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে ভয়-আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে আশপাশের অনেকে মরদেহ দেখতে ভিড় করে।
খোদেজার বড় ভাই আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, সজিব আমাকে ফোন করে বলেছে মাকে কেনো মাটি দিলেন। সে আমাকে হত্যা করার হুমকিও দিয়েছে। আমাদের পরিবার নিয়ে বর্তমানে চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি।
কালিয়াকৈর থানাধীন ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুরুজ জামান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও মর্মান্তিক। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় মরদেহটি পুনরায় দাফন করা হয়েছে।

বি এম সাঈদ, গাজীপুর (কালিয়াকৈর)