পদ হারালেন জলঢাকা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেল
নীলফামারীর জলঢাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেলকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা কমিটি। গত রোববার উপজেলার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় পদ হারালেন তিনি। যদিও এই ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি রুবেলের। ঘটনার পেছনে কারা আছে, তা খুঁজে বের করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমদে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রুবেলের পদচ্যুতি নিশ্চিত করা হয়। একইসঙ্গে কারণ তুলে ধরা হয়।
এর আগে গত মার্চে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে হয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ হারান আনসার আলী মিন্টু। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সহসভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা।
জানা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন শহীদ হোসেন রুবেল। আগামী ৩০ জুলাই এই উপজেলায় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনকে সফল করতে গত রোববার রাতে জলঢাকা ডাকবাংলোয় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জেলা ও উপজেলা নেতারা অংশগ্রহণ নেন। একপর্যায়ে হট্টগোল, ভাঙচুর এবং চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক, জলঢাকা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুই কর্মী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।
পরে উপজেলা শহরের কলেজ পাড়ার নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। এতে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ত্রিবার্ষিক সম্মেলন সফল করতে মতবিনিময় সভা চলছিল। হঠাৎ অব্যাহতি প্রাপ্ত উপজেলা সভাপতি আনসার আলী মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে হট্টগোল শুরু হয়। পরে চেয়ার ভাঙচুর ও হামলা চালানো হয়। এতে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত দশ নেতাকর্মী আহত হন।’
অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘২০০৪ সাল থেকে দায়িত্বে রয়েছে বর্তমান কমিটি। তাঁরা সম্মেলন আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছেন। এবার সম্মেলন বন্ধ করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ৩১ মার্চ নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত দিন অনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই এই সম্মেলন হওয়ার কথা। সে হিসেবে প্রস্তুতি চলছে। এরই অংশ হিসেবে গত রোববার মতবিনিময় সভায় হয়। সেখানে হামলা করে সম্মেলন বন্ধ করার অপচেষ্টা চলেছে।
এদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে শহীদ হোসেন রুবেল বলেন, ‘আমিও হামলার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি। আমরা হামলা ভাঙচুর করিনি।’ হামলার পেছনে কারা আছেন তা তদন্ত করে বের করার অনুরোধ জানান তিনি।
রুবেল বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফার কারণে এতদিন সম্মেলন করা যায়নি। তিনি বাঁধা দিয়েছেন। আমরা সম্মেলন চাই। তবে, সেটি যেন গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়। তাহলে কোনো আপত্তি থাকবে না।’
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, ‘মতবিনিময় সভায় বহিরাগতদের নিয়ে আসা হয়। তারা অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল, ভাঙচুর চালায়। এসময় আমিসহ জেলা সাধারণ সম্পাদকের শরীরে চেয়ার ও ইট পাটকেল ছুড়ে আহত করা হয়।’
দেওয়ান কামাল আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আর যারা জড়িত আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং আগামী ৩০ জুলাই জলঢাকা উপজেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।’