পাবনার পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই
পাবনার পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। বেড়া পৌর এলাকার করমজা চতুরবাজারের পশুরহাটে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গতকাল মঙ্গলবারও পশু হাট বসেছে। উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম এই পশুর হাটে তিল ধারণের জায়গাও ছিল না। আজ মঙ্গলবার কমপক্ষে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে এই হাটে।
হাট কমিটির পক্ষ থেকে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা খুব একটা কাজে লাগতে দেখা যায়নি। ফলে করোনার উচ্চ সংক্রমণের এই সময়ে বিষয়টি মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে।
সরেজমিনে হাটটি ঘুরে জানা গেছে, প্রায় ১৫ বিঘা জুড়ে হাটের বিস্তৃতি। আজ মঙ্গলবার হাটে প্রচুর পশুর আমদানিতে হাটটি এর মূল জায়গা ছাপিয়ে সেটি পাবনা-ঢাকা মহাসড়ক পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। ফলে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজটের। এমন পরিস্থিতে হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা কারোরই ইচ্ছা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো উপায় ছিল না। অনেকেই মাস্ক পড়ে হাটে এলেও প্রচণ্ড গরমের কারণে বেশিরভাগ লোকজনই মাস্ক খুলে ফেলেন। হাটে থাকার সময় মাস্কবিহীন অবস্থায় তাঁরা একে অপরের গায়ে গায়ে প্রায় লেপ্টে থাকে। করোনার উচ্চ সংক্রমণের সময়ে বিষয়টিকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক ফাতেমা তুজ জান্নাত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘করোনার উচ্চ সংক্রমণের এই সময়ে গাদাগাদি করে এমন ভিড় মোটেও কাম্য নয়। স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও উদ্বেগের।’
এদিকে, হাটে আসা গৃহস্থ ও খামারিরা জানান, হাটে কোরবানির প্রচুর পশু উঠলেও ক্রেতা ছিল বেশ কম। ফলে এর আগের হাটগুলোর চেয়ে আজ মঙ্গলবার পশুর দামও ছিল কিছুটা কম।
গরু ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল হাটে গরুর দাম অন্য হাটগুলোর চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম ছিল।
হাটে গরু নিয়ে আসা বেড়া উপজেলার চাকলা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এক বছর ধইর্যা দুইটা গরু পালতেছি। আশা করিছিল্যাম গরু দুইটার দাম কমপক্ষে আড়াই লাখ টাকা হবি। কিন্তু এর দাম উঠিছে মাত্র এক লাখ আশি হাজার টাকা।’
বেড়া পৌর এলাকার জোড়দহ গ্রামে গিয়ে কথা হয় গরু পালনকারী জহুরা বেগম ও তাঁর ছেলে বাবুর সঙ্গে। তাঁরা জানান, মঙ্গলবার বাড়ি থেকেই ১৬ মণ ওজনের একটি গরু তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু তাঁরা এর চেয়ে আরও বেশি দাম আশা করেছিলেন।
এদিকে সরেজমিনে হাট ঘুরে গাদাগাদি করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের অবস্থান করতে দেখা যায়। অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি।
হাটে গরু নিয়ে আসা পাবনার দাড়িয়াপুরের গরুর ব্যাপারী নাজমুল হোসেন বলেন, ‘মূল হাটে জায়গা না পেয়ে দুটি গরু মহাসড়ক সংলগ্ন ব্রিজে নামিয়েছি। হাটের ভেতরে ঢুকতে পারবো কিনা জানি না।’
হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান উকিল বলেন, ‘গরুর হাট বিধিনিষেধের বাইরে। তাই আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট বসিয়েছি। আমাদের হাটে আজ আমরা প্রায় প্রচুর মাস্ক বিতরণ করেছি। এ ছাড়া স্যানিটাইজার ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’
পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব আফরোজা আক্তার বলেন, ‘চলমান বিধিনিষেধ অনুযায়ী অস্থায়ী হাট বসায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নিয়মিত হাটগুলোর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনা করার জন্য করমজা হাট কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছি।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘পাবনা জেলায় মোট ২৬টি হাট বসানোর জন্য অনুমতি আছে। অস্থায়ী হাট বসাতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সব ইউএনওকে নির্দেশনা দিয়েছি। সাঁথিয়া উপজেলার করমজা হাট বসানোর বিষয়ে খোঁজ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’