প্রতিবেশির হিংস্রতায় মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছে গরুটি, আহত মালিক

প্রতিবেশির হিংস্রতায় মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছে গরুটি। পাটক্ষেত নষ্টের কারণে গরুটির রগ (লিগামেন্ট) কেটে দিয়েছে প্রতিবেশি। এতে গরুর শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তারপর থেকেই গরুটি মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। প্রাণি চিকিৎসকদের হাতে এর কোনো চিকিৎসা নেই। তাই অবলা পোষ্য গরুটির জীবন সংকটের মধ্যে পড়েছে। এমন হৃদয়বিদারক পাশবিক ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর পৌরসভার প্রভাকরদি গ্রামে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে গরুর মেডিকেল প্রত্যয়ন দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেশি বকনা জাতের এ গরুর বয়স ১ বছর ১১ মাস উল্লেখ করা হয়েছে। লালচে রংয়ের এ গরুটির পেছনের ডান পায়ের হাঁটুর নিচে রগ (লিগামেন্ট) ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিচ্ছিন্ন করার কথা মেডিকেল প্রত্যয়নে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে প্রতিবাদ করায় গরুর মালিক মো. সেলিম সরদারকে (৫০) মারপিট করে ডান হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার দুপুরে।
তাৎক্ষণিকভাবে গরুটি উদ্ধার করে মুকসুদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। ওই কার্যালয়ের চিকিৎসকরা গরুটিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন।
মুকসুদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গরুর পেছনের ডান পায়ের হাঁটুর নিচে রগ (লিগামেন্ট) ধারালো বস্তু দিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গরুটিকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। কিছুদিন পর গরুর ক্ষত স্থানে পচন ধরতে পারে এবং ধীরে ধীরে এক সময় গরুটি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে। আমাদের দৃষ্টিতে গরুটির শারীরিক অবস্থা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, মানুষের রগ (লিগামেন্ট) কেটে গেলে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। সঠিক চিকিৎসা পেলে মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু বাংলাদেশে গরুর রগকাটা গেলে এখনো আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। রগকাটা গরুর চিকিৎসা আমাদের কাছে নেই।
মুকসুদপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর প্রভাকরদি গ্রামের নিয়ামত খান বলেন, গরুর রগ কাটার প্রতিবাদ করায় গরুর মালিকের ডান হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
গরুর মালিক প্রভারকদি গ্রামের মো. সেলিম সরদার বলেন, আমি গ্রামের ইমদাদ মোল্লার পাট ক্ষেতের পাশের ফাঁকা জায়গায় গরুটি গোছড় (বেঁধে) দিয়ে আসি। সেখানে গরুটি ঘাস খাচ্ছিল। পরে দুপুরের দিকে খবর পাই আমার গরুর রগ প্রতিবেশি মজিদ মোল্লা ওরফে কুটি মোল্লার ছেলে ইমদাদ মোল্লা কেটে দিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে গেলে ইমদাদ মোল্লা ও তার ছেলেরা পিটিয়ে আমার হাত ভেঙে দিয়েছে। আমার অবলা গরুটি এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। আমি দুই যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
অভিযুক্ত ইমদাদ মোল্লার ছেলে রমজান মোল্লা বলেন, গরুর রগ কাটা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। সেলিম সরদারের গরু আমাদের পাটের ক্ষেতে এসে পাট ভাঙতে থাকে। পরে আমার বাবা গরুটি রশিসহ ধরে বাড়ির কাছে নিয়ে আসেন। এ নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আমার বাবা ও আমি আহত হয়েছি।
এ ব্যাপারে মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।