পাবনায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারমানের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী।
ওই চেয়ারম্যানের নাম আবু হামিদ মোহাম্মদ মোহাইমিন হোসেন চঞ্চল। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দেবোত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
গত মঙ্গলবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই ছাত্রী এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই ছাত্রী দাবি করেন, বিয়ের কথা বলায় দেবোত্তর ইউপির চেয়ারম্যান চঞ্চল তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিসহ ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে মেয়েটি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন।
তবে এ বিষয়ে চঞ্চল চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওই ছাত্রী তাঁর বিবাহিত দ্বিতীয় স্ত্রী। এক সপ্তাহ আগে তাদের ডিভোর্স হয়েছে। তাঁর সঙ্গে কোনো অবৈধ বা অনৈতিক ঘটনা ঘটেনি। ডিভোর্স দেওয়ায় তিনি ক্ষেপেছেন। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ওই ছাত্রীকে এখন আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ওই ছাত্রী আরও দাবি করেন, ‘শুধু আমি নই, আমার বড় বোনও এই চেয়ারম্যানের লালসার শিকার হয়ে মারা গেছেন। যা আমরা জানতে পারি মাত্র কয়েক দিন আগে। বাড়ির বইপত্র গোছগাছ করার সময় পাওয়া একটি ডায়েরি থেকে।’
ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘আমার বোনের প্রেমিক চঞ্চলের হাতে লেখা একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি থেকে জানতে পারি, আমার বোনের সঙ্গে চেয়ারম্যান চঞ্চলের প্রেমের সম্পর্ক হয় ২০১০ সালে। চঞ্চল তখন দেবোত্তর ইউনিয়নের ইশারত আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার বোন ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। আমাদের বাড়িতে চঞ্চলের যাতায়াতের সুবাদে তার সঙ্গে প্রেম হয়। আমার বোনকে বিয়ে করবে আশ্বাস দিয়ে ২০১২ সালে বেড়াতে নিয়ে যায় পাবনা শহরে। সেখানে এক বাড়িতে চঞ্চল তাকে ধর্ষণ করেন। বোন বাড়িতে ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বোনের মৃত্যুকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিই। কারণ তখন আমরা বিষয়টি জানতাম না। বোন মারা যাওয়ার পর চঞ্চল সান্ত্বনা দিতে আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকেন।’
ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘২০১৭ সাল পর্যন্ত এভাবেই সামাজিক সম্পর্ক চলে আসছিল। এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় আমরাও বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিই। এক পর্যায়ে চঞ্চল আমাকে বলেন, আমার বোনকে তার বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মারা যাওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। এ জন্য তিনি আমাদের পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে প্রস্তাব দেন। এতে আমার সঙ্গে চঞ্চলের স্বাভাবিক সম্পর্ক হয়। পরে তা প্রেমে গড়ায়। বিয়ের বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত হলে একদিন আমাকে বেড়ানোর কথা বলে পাবনা শহরে নিয়ে যান। সেখানে জোরপূর্বক আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন এবং তা মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখেন। সেই ভিডিওর সুযোগ নিয়ে বারবার আমার সঙ্গে অনৈতিকভাবে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। বিয়ের কথা বললে নানা টালবাহানা করতে থাকেন। পাশাপাশি নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন। এত দিন পর বোনের ডায়েরি পাওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আমাদের ধারণা, আমার বোনের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘটন হবে।’
ঢাকার সংবাদ সম্মেলনে ওই ছাত্রীর বাবাও উপস্থিত ছিলেন।