পার্সেলে পিস্তল পাঠানো রাজীবের দেশে ফেরা নিয়ে ধোঁয়াশা
ইতালি থেকে ডাকযোগে পিস্তল ও কার্তুজের প্রেরক রাজীব বড়ুয়ার দেশে ফেরা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। ‘তদন্ত ও গ্রেপ্তারের স্বার্থে’ ঘটনা খোলসা করতে নারাজ পুলিশ। এরই মধ্যে পার্সেলের প্রাপক চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের কর্মচারী মজুমদার কামরুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইতালির রোম থেকে বৈদেশিক ডাকে আসা চালান পরীক্ষা করে গৃহস্থালি পণ্যের ভেতর চারটি পিস্তল ও ৬০ রাউন্ড কার্তুজ পায়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাতে দুটি পিস্তল খেলনা ও দুটি এইট এমএম বোরের আসল পিস্তল।
এ ঘটনায় প্রাপকের ঠিকানা অনুযায়ী চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের কর্মচারী মজুমদার কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত মঙ্গলবার বন্দর থানার উপরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল সরোয়ার তাঁকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলাম।
তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, রাজিব বড়ুয়া ইতালি থেকে দেশে ফেরার আগে বন্ধুর ঠিকানায় পিস্তল পাঠিয়েছেন। এরপর অস্ত্র ধরা পড়ার পর রাজিব গা ঢাকা দেন।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রাপককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’ প্রেরক দেশে আছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তদন্ত ও আটকের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’
কাস্টমস নথি অনুযায়ী, গত রোববার সিজিএস কলোনির বাসিন্দা কামরুল হাসানের ঠিকানায় গৃহস্থালি সামগ্রীর একটি চালান পাঠান রাজীব বড়ুয়া। চালানটিতে গৃহস্থালি পণ্যের পাশাপাশি দুটি পিস্তল ও ৬০টি গুলি এবং আরও দুটি খেলনা পিস্তল জব্দ করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে ফরেন পোস্ট অফিসে চালানটি ইতালির রোম থেকে আসে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন রেজভী জানান, চালানটিতে ড্রিল মেশিন, কাচের গ্লাস, সাবান, চকলেট, ছুরি, ফ্রাইপ্যান, লোশন, লেডিস ব্যাগ, হ্যান্ড ব্যাগ, আইরন ও মাল্টিপ্লাগসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্য ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালানটি পরীক্ষা করে বিশেষভাবে লুকানো অবস্থায় এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
পরদিন সোমবার সকালে শুল্ক আইন-১৯৬৯, বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ এবং অস্ত্র আইন-১৮৭৮-এর বিভিন্ন ধারায় নগরের বন্দর থানায় মামলা করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মামলাটি করেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।
মামলার আসামিরা হলেন, পণ্য চালানের প্রাপক সিজিএস কলোনির মজুমদার কামরুল হাসান ও ইতালি থেকে পণ্যের প্রেরক রাজীব বড়ুয়া।
এরপর একই দিন দিবাগত রাত ১১টার দিকে নগরের হালিশহর আই ব্লকের ৬ নম্বর রোডের শ্বশুরবাড়ি থেকে কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, কামরুল হাসান চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর তৃতীয় শ্রেণির পদে কর্মরত আছেন। তিনি আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। অন্যদিকে ইতালি থেকে যিনি অস্ত্রগুলো পাঠিয়েছেন সেই রাজীব বড়ুয়া মুন্নার বাসাও সিজিএস কলোনিতে। তাঁর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে। রাজীবের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। সে সব মামলায় তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। পরে ২০০৯ সালে তিনি ইতালিতে যান।