পুলিশি অভিযানে পুরুষশূন্য সালথার গ্রাম, আরও ৪ মামলা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/04/09/faridpur-saltha-1.jpg)
ফরিদপুরের সালথায় সহিংসতার পর পুলিশি অভিযানে উপজেলার আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। আজ শুক্রবার সকালে ওই এলাকার বাড়িঘরগুলোতে নারী আর শিশু ছাড়া কোনো পুরুষ দেখা যায়নি। শিশু ও নারীদের চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ।
গত ৫ এপ্রিলের ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে পাঁচটি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৬১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৬ হাজার ৮০০ জনকে। আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোট ৫১ জনকে। তাদের মধ্যে ২২ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
নতুন যে চারটি মামলা হয়েছে তার একটি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর। এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলা করেছেন সালথার উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) মোহাম্মাদ হাসিব সরকারের গাড়িচালক মো. হাশমত আলী। এই মামলায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখ এবং তিন থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস আরেকটি মামলা করেছেন। এ মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং তিন-চার হাজার অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িচালক মো. সাগর সিকদার। এ মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে তিন-চার হাজার অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/04/09/faridpur-saltha-02.jpg)
এর আগে গত বুধবার সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং প্রায় চার হাজার অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি দেখিয়ে থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রথম মামলাটি করেন।
ফুকরা বাজার এলাকার করিমন বেগম বলেন, সব সময় ভয়ে রয়েছি। পুলিশ দেখতে দেখতে সারা দিন কেটে যাচ্ছে। বাড়িতে কোনো পুরুষ নেই। সবাই পালিয়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।
নূরজাহান নামে একজন জানান, ওই দিন অন্য এলাকা থেকে লোকজন এসে হামলা করেছে। আমাদের গ্রামের কোনো লোক ছিল না। তিনি বলেন, ‘শুনেছি ফুকরা বাজারে এসিল্যান্ডের সঙ্গে থাকা সদস্যদের বাজারের লোকজনের গুণ্ডগোলকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে।’
গট্রি এলাকার মনির নামের একজন জানান, বালিয়া গট্রি এলাকা ও উপজেলাকেন্দ্রিক এলাকার বাড়িগুলোতে কোনো পুরুষ নেই। ঘটনার পর থেকে ওই সব এলাকার লোকজন পলাতক অবস্থায় রয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, কোনো নিরীহ লোক যেন হয়রানির শিকার না হয়।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, এ ঘটনার পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ দিনরাত অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশি অভিযানের কারণে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকাগুলো। তারপরও পুলিশ তাদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, এই ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা পুলিশ গ্রহণ করবে। এই ব্যাপারে কোনো রকমের ছাড় দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে ৫১ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি। এ সময় সহকারী কমিশনারের উপস্থিতিতে মানুষ ছোটাছুটি করে। পরে স্থানীয়রা জড়ো হয়। মানুষের ভিড় দেখে মারুফ সুলতানা ফুকরা বাজার থেকে চলে আসেন। পরে হেফাজতের এক আলেমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এমন গুজব ছড়িয়ে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা ও লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও থানায় এই তাণ্ডব চালায়। হামলাকারীরা তিন ঘণ্টাব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি উপজেলা পরিষদ চত্বরের গাছপালা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও। এতে সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তাণ্ডব চলাকালে ইউএনও-এসিল্যান্ডের দুটি সরকারি গাড়ি সম্পর্ণ পুড়িয়ে দেয় তারা। এ ছাড়া সাংবাদিকের একটি মোটরসাইকেলসহ তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় এবং দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫৮৮ রাউন্ড শটগানের গুলি, ৩২টি টিয়ার গ্যাসের শেল, ২২টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫টি রাইফেলের গুলি ছুড়ে।