প্রতিপক্ষের হামলায় আহত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু
প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আদিবাসী নেতা সুব্রত সাংমা (৪৭)। তিনি উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামের সুধীর মানখিনের ছেলে। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
রাজনৈতিক বিরোধ ও এলাকার আধিপত্য বিস্তারের জেরে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিপক্ষের কয়েক দফা হামলার শিকার হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন গারো সম্প্রদায়ের সাবেক নেতা এই ইউপি চেয়ারম্যান। শনিবার দুপুরে সেখানেই তিনি মারা যান।
পুলিশ জানায়, হামলার ঘটনায় আগে একটি মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছিলে দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়ালকে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় কুল্লাগড়া ইউনিয়নের স্থানীয় রাশমণি বাজার এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত সুব্রত সাংমার ওপর হামলা চালায়। তাকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসার জন্য মোটরসাইকেলে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হচ্ছিল। পথে শিবগঞ্জের সোমেশ্বরী নদীর ঘাট এলাকায় পৌঁছালে আবারও হামলার শিকার হন তিনি। এ সময় তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা।
এ সময় সুব্রত সাংমাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার আটদিন পর শনিবার দুপুর সোয়া ১২টায় সেখানেই মারা যান তিনি।
এ হামলার ঘটনায় রাতেই দুর্গাপুর থানায় মামলা করেন সুব্রত সাংমার বোন কেয়া তজু। মামলায় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল, তার দুই ভাই শামীম মিয়া ওরফে শুটার শামীম ও বদিউজ্জামানসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৬ জনকে আসামি করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্গাপুর থানার ওসি মো. শিবিরুল ইসলাম বলেন, মামলায় ১২ জন আসামি মঙ্গলবার নেত্রকোনার মুখ্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর আদালতে হাজির হয়ে সেখান থেকে জামিনে রয়েছেন। আগের করা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। মৃত্যুর এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আদিবাসী নেতা সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। স্থানীয়রা হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দুর্গাপুর সদর উপজেলার উৎরাইল বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সুব্রত সাংমা স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন বলিষ্ঠ নেতা ছিলেন। তিনি গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে অল্প ভোটের ব্যবধানে আব্দুল আউয়ালের কাছে হেরে যান। এর আগে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়ালের সাথে সুব্রত সাংমার দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল। আউয়াল এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এর বিরোধিতা করে আসছিলেন সুব্রত সাংমা। শেষ নাগাদ সুব্রত সাংমা খুন হলো। আমরা এই হত্যার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। হত্যার প্রতিবাদে দলীয়ভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।