স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে আধুনিকায়ন করছে সরকার। এ অধিদপ্তরকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে নতুন আসা সর্বাধিক উচ্চতার দুটি টিটিএল গাড়ির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজ রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার লেডার সংবলিত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের গাড়ি যুক্ত হলো ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের যান্ত্রিক বহরে এ কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) নামের এই গাড়িটি দিয়ে ৬৮ মিটার উচ্চতা অর্থাৎ বহুতল ভবনের ২৪তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ করা যাবে। এ সময় আসাদুজ্জামান খান সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহত ১৩ ফায়ার ফাইটারকে ‘অগ্নি বীর’খেতাবে ভূষিত করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী।

মন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে যেখানে ফায়ার সার্ভিসের বহুতল ভবনে কাজ করার মতো মাত্র একটি পুরোনো গাড়ি ছিল, যা দিয়ে ৮ থেকে ১০তলার ওপরে কাজ করা যেতো না, বর্তমান সরকারের আমলে আমরা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য বহুতল ভবনে কাজ করার মতো ২৪টি উঁচু মইয়ের গাড়ি এনেছি। আজ ৬৮ মিটার উচ্চতার লেডার সংবলিত গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যুক্ত হওয়ায় তাদের অপারেশনাল কাজের সক্ষমতা ২৪তলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের জনবল বৃদ্ধিতেও বর্তমান সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০০৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানের মোট জনবল ছিল মাত্র ৬ হাজারের সামান্য বেশি। বর্তমানে এই জনবল হয়েছে ১৪ হাজারের অধিক। ফায়ার স্টেশন নির্মাণের চলমান প্রকল্প শেষে এই সংখ্যা হবে প্রায় ১৬ হাজার। এ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩১ হাজার করার জন্য অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সকাল সাড়ে ১১টায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে এসে পৌঁছালে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় স্বাগত জানান। এ সময় অনুষ্ঠানের দুই বিশেষ অতিথি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর স্যালুটিং ডায়াসে আরোহণ করলে প্রধান অতিথিকে চৌকস অগ্নিসেনাদের একটি দল সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানান। প্রধান অতিথি অভিবাদন গ্রহণ করার পর ফিতা কেটে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের যান্ত্রিক বহরে সদ্য যোগ হওয়া ৬৮ মিটার উচ্চতার দুটি টিটিএল গাড়ির উদ্বোধন করেন।

এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষ দোয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্ট জাতির পিতার পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত,  দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেন। একই সাথে সীতাকুণ্ডে অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা যাওয়া শহিদ ফায়ারফাইটারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মানুষের জীবন নিরাপদ রাখার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় ১৩ জন ফায়ারফাইটারের শহীদ হওয়ার মাধ্যমে তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। এই ১৩ ফায়ার ফাইটারকে সরকারিভাবে ‘অগ্নি বীর’খেতাবে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদ্বয়ের হাতে স্মৃতির নিদর্শন হিসেবে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট হস্তান্তর করেন।