বাংলাদেশের একা রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত না : জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুস বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের উচিত রোহিঙ্গাদের সাহায্য করা। তবে একক দেশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়াটা বাংলাদেশের একার পক্ষে উচিত না এবং সম্ভবও না।
আজ রোববার বাংলাদেশে নিজের পরিদর্শন শেষে দেওয়া বক্তব্যে টম অ্যান্ড্রুস এ কথা বলেন।
এসময় টম বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সম্পদের একটি সমৃদ্ধ উৎস প্রয়োজন। এই সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের প্রয়োজন ও প্রাপ্য একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব। কারণ এই সঙ্কটের কারণ ও সমাধান বাংলাদেশ না, এটা সম্পূর্ণই মিয়ানমারের হাতে।
অ্যান্ড্রুস বলেন, তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধু হিসেবে কাজ করতে, তাঁর রিপোর্টিং চালিয়ে যেতে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে এখানে ফিরে আসার জন্য উন্মুখ।
জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আরও বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমি এমন একটি মিয়ানমারকে দেখার অপেক্ষায় আছি যেখানে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও মানবিকতা প্রাধান্য পাবে। এবং আমি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে শরণার্থী হিসেবে নয়; তাদের নিজ দেশে, মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে দেখা করতে পারব।
জাতিসংঘের বিশেষ এই র্যাপোর্টিয়ার মিয়ানমারের নৃশংস ও অপরাধমূলক গণহত্যা থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন ও ধন্যবাদ জানান। এর আগে তিনি ভাসানচর পরিদর্শন করেন, যেখানে সরকার এ পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তরিত করেছে।
টম অ্যান্ড্রুস বলেন, বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং দ্বীপের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এটা আমার কাছে স্পষ্ট যে, ভাসানচরে শরণার্থী শিবির নির্মাণের জন্যও বাংলাদেশ সরকারের যথেষ্ট সম্পদ ব্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওপর চাপ প্রদান অব্যাহত রাখা এবং এই সংকটের জন্য সামরিক জান্তাকে সম্পূর্ণরূপে দায়বদ্ধ করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নেবেন। এ ছাড়া এই সংকট সমাধানের জন্য আরও শক্তিশালী, সমন্বিত ও কার্যকর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছু করবেন।
অ্যান্ড্রুস বলেন, বাংলাদেশ অগণিত মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। নির্যাতিত এই মানুষগুলোকে বুকে টেনে নিয়েছিল বাংলাদেশ, তাই সেসময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো অকথ্য নির্যাতন থেকে রোহিঙ্গারা বেঁচে গেছে। যারা মানবাধিকারকে শ্রদ্ধা করে তারা সবাই বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অ্যান্ড্রুস আরও বলেন, এই পরিদর্শনকালে কুতুপালং বা ভাসানচরে আমার সঙ্গে কথা বলা প্রায় প্রত্যেক রোহিঙ্গাই জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব তারা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়।