বান্দরবানের সীমান্তে আতঙ্ক, সতর্ক রয়েছে বিজিবি
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে তুমব্রু এলাকায় মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেল বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা নাগরিকের মৃত্যু ও পাঁচজন আহত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত অঞ্চলে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রটি পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার জেলার কুতুপালং বিদ্যালয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে শনিবার সকাল থেকে গোলাগুলি ও মর্টারশেল ছোড়ার কোনো শব্দ শোনা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় অধিবাসীরা জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডের রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রের পাশে কোনাখাল এলাকায় ফের তিনটি মর্টারশেল এসে পড়েছিল শুক্রবার রাত আটটায়। সীমান্তের এপারে এসে পড়েছিল ভারী অস্ত্রের গুলিও। এসময় মর্টারশেল বিস্ফোরিত হয়ে রোহিঙ্গা শিশুসহ ছয়জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে মো: ইকবাল নামে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। আহত অন্য পাঁচজনের অবস্থাও গুরুতর। তারা কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হতাহতরা সকলেই কোনাপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডের রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবানের ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে। সীমান্ত সুরক্ষায় সতর্কবস্থায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্তে নজরদারী বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রটি সরিয়ে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেল বিস্ফোরিত হয়ে এক রোহিঙ্গা নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও পাঁচজন। এর আগে সীমান্তের জিরো লাইনে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে অন্ন্যাথাইং নামে এক বাংলাদেশির পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে আস্তানা ও ক্যাম্প দখলের যুদ্ধ চলছে। আরাকান আর্মির আস্তানা ধ্বংসে মিয়ানমার সেনাবাহিনী যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার থেকেও গোলা বর্ষণ করছে। শুক্রবার তৃতীয় দফায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারি বাহিনী এবং সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে চলমান সংঘাতে তিনটি মর্টারশেল এসে পড়েছিল তুমব্রু সীমান্তে। এরআগে যুদ্ধ বিমান ও মর্টার থেকে ছোড়া গোলা আরও দু’বার এসে পড়েছিল ঘুমধুম সীমান্তের জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। ভারী অস্ত্রশস্ত্রের গুলিও বিভিন্ন সময়ে উড়ে এসে পড়েছে বাংলাদেশ সীমানায়। একারণে ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম-তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু-আমতলী সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় সীমান্তের বাসিন্দাদের অনেকেই পার্শ্ববর্তী এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।