বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ
দীর্ঘদিন ধরে দাম স্থিতিশীল থাকার পর আবারও অস্থির হয়ে উঠছে পেঁয়াজের বাজার। ফলে, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আড়তগুলোতে কয়েকদিন থেকে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিনই দু-এক টাকা করে বেড়ে আজ শুক্রবার দুপুরে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে।
সম্প্রতি কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে অন্তত ১০ থেকে ১২ টাকা। সর্বশেষ গত সোমবার প্রতি কেজি ২৬ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি।
এদিকে, হঠাৎ করে দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকারসহ ভোক্তারা।
জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম জানান, ভারতের পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকাগুলোতে সাম্প্রতিক কালে বন্যা হওয়ায় আবাদ ব্যাহত হয়েছে। ফলে, সেখানে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেওয়ায় চাহিদা মতো পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কেজিতে আট থেকে ১০ টাকা করে ভারতের ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে।
আমদানিকারক আরও জানান, বাংলাদেশে ভারতের পেঁয়াজের প্রচুর চাহিদা। তাই সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বেশি দাম দিয়ে আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। তবে বন্দর দিয়ে আগের চেয়ে পেঁয়াজের আমদানি কম হচ্ছে। আরও দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা এই ব্যবসায়ীর।
আরেক আমদানিকারক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি কম হওয়ায় দেশের বাজারে চাহিদার মতো সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে দাম বাড়ছে। ভারতে নতুন পেঁয়াজ না উঠা পর্যন্ত দাম আরও বাড়তে পারে। এখন থেকে সরকারকে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দামের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা তিন দিন আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৬ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকার কাছে।’
বন্দরের আড়তে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকার আইয়ুব আলী বলেন, ‘বন্দরের আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাই। প্রতিদিনই দুই-এক টাকা করে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন দিনে এক লাফে ১০-১২ টাকা বেড়েছে। খুব সাবধানে কিনতে হচ্ছে। কারণ, দাম বেশি। আবার পচনশীল। লোকসানে পড়া যাবে না।’
বাংলা হিলি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মাইদুল বলেন, ‘আমদানি করা পেঁয়াজ কয়েক ভাগে বাছাই করে আলাদা করা হয়। ভালো মানের পেঁয়াজ বাইরে পাঠানো হয়। আর তুলনামূলক কম মানের পেঁয়াজ আমরা বাজারে বিক্রি করি। সেই পেঁয়াজের দামও চড়া। শুনেছি, ভারতে দাম বেড়েছে। আমাদের এখানেও দাম আরও বাড়বে।’
আজ বাজারে কথা হলে ক্রেতা আমিনুল ও সলেমান বলেন, ‘এতদিন দাম নাগালের মধ্যে ছিল। দীর্ঘদিন ধরে ২০ টাকার মধ্যে কিনেছি। আমরা দিন আনি, দিন খাই। অন্যান্য পণ্যের মতো পেঁয়াজের দামও বাড়ছে। আমাদের খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।’
বন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন মল্লিক জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিলি বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। ৮ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু হওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা অব্যাহত রয়েছে। তবে, আগের চেয়ে পেঁয়াজের আমদানি কম হচ্ছে। ভারতে বন্যার কারণে সংকট দেখা দেওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে আমদানিকারকরা চাহিদামতো পেঁয়াজ আমদানি করতে পারছেন না।
এদিকে, হিলি স্থলশুল্ক স্টেশনের তথ্যমতে, গত পাঁচ কার্যদিবসে ভারতীয় ১১৪টি ট্রাকে তিন হাজার ১৩ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।