বিনা দোষে ৮ দিন জেলে কিশোর : আদালতে ক্ষমা চাইলেন ওসি
জসিম উদ্দিন (১৬)। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার বাসিন্দা। বাবা মো. জয়নাল একজন দিনমজুর। অভাবের কারণে কিশোর ছেলে জসিমও বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করেন। ভালোই চলছিল সংসার। হঠাৎ করেই ছেলে মাদকের দুটি মামলায় আসামি হয়ে যায়, এতে গ্রেপ্তারও করা হয়।
বাবা জয়নালের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় থানায় গিয়ে জানতে চান, তাঁর ছেলে কী মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে? থানা কর্তৃপক্ষ জানায়, ছেলে ঢাকায় দুটি মাদক মামলার আসামি। ওয়ারেন্ট এসেছে গ্রেপ্তারের জন্য। বাবা তো অবাক, জন্ম নেওয়ার পরে ছেলে কোনোদিন ঢাকায় যায়নি। মাদকের বেঁচাবিক্রি কীভাবে করবে? তখন তিনি স্থানীয় এক আইনজীবী মো. মনির হোসেনের পরামর্শ গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলার খোঁজ নিয়ে দেখেন, জসিম উদ্দিন কোনো মামলার আসামি নন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কিন্তু, কেন গ্রেপ্তার করা হলো? এরপরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল ইসলামের আদালতে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী মো. মনির হোসেন।
আইনজীবী জামিনের আবেদনে উল্লেখ করেন, দক্ষিণখান থানার দুটি মাদকের মামলায় জসিম উদ্দিন কোনো আসামি নন। সে মামলায় আসামি মো. নুর ইসলাম ওরফে সজীব। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। কিন্তু, কুমিল্লা নাঙ্গলকোট থানার পুলিশ গত ৮ আগস্ট জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে এবং আসামি নির্দোষ। এরপরে আদালত জসিম উদ্দিনের জামিন মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে আইনজীবী মনির হোসেন আজ মঙ্গলবার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জসিম উদ্দিনের জামিনের সময় নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক ও ওয়ারেন্ট কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফেরদৌসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করলে আদালত তাদের লিখিত জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন।’
আইনজীবী মনির বলেন, “আজ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল ইসলামের আদালতে ওসি ফারুক ও ওয়ারেন্ট অফিসার ফেরদৌস এলে তাঁরা আদালতের কাছে ভুল হয়েছে মর্মে ক্ষমা চান। সে সময় তাঁরা আদালতে বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান শনাক্ত করার কারণে আসামি জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে, এটি ভুল হয়েছে। সে সময় বিচারক ওসির কাছে জানতে চান আপনাকে আট সেকেন্ডর জন্য জেলে রাখলে কেমন লাগবে? আর একজন কিশোরকে বিনা বিচারে আট দিন জেলে রাখলাম। আপনার কারণে কিশোর বিনাবিচারে কারাগারে ছিল। তখন তিনি জসিমকে অব্যাহতি দেন এবং ওসি ও ওয়ারেন্ট অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।”
আদালতে মো. জসিম উদ্দিনের আইনজীবী আব্দুল আর মনসুর রিপন শুনানিতে বলেন, ‘বিনা বিচারে এক সেকেন্ড কোনো আসামি জেলে থাকলে তা সংবিধান পরিপন্থি। প্রকৃত আসামির নামের সঙ্গেও ভুক্তভোগী জসিমের নামের কোনো মিল নেই। তাহলে কেন পুলিশ এই নিরপরাধ আসামিকে গ্রেপ্তার করল?’
আইনজীবী আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী জসিম যদি প্রকৃত আসামি হতো, তাও তাঁকে কিশোর সংশোধানাগারে রাখা হতো। কিন্তু, পুলিশের এই অবহেলার কারণে কারাগারে আসামিদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। আমরা মামলা থেকে মো. জসিমের অব্যাহতি চাই, পাশাপাশি পুলিশের গাফিলতির জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে আদালতের কাছে আবেদন জানাই।’