বীর প্রতীক তারামন বিবির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক তারামন বিবির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৮ সালের এই দিনে তিনি কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।
দিনটি উপলক্ষে আজ বুধবার তার গ্রামের বাড়ি রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া গ্রামের বাড়িতে বাদ মাগরিব পারিবারিকভাবে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এ ছাড়াও বাদ আছর কুড়িগ্রামের আরাজি পলাশবাড়ি এলাকার গুচ্ছ পাড়ার বাড়িতে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে আবু তাহের ও বীর প্রতীক তারামন বিবির ভাই হাসান মিয়া।
তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে। তিনি উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামের প্রয়াত আব্দুস সোবহানের সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে তৃতীয়। তিনি লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রান্না করতেন ১৪ বছর বয়সী তারামন। রান্না করতে করতে অস্ত্র চালাতে শেখেন। তারপর রান্নার খুন্তি ফেলে রাইফেল হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন সন্মুখ সমরে।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হলেও সে কথা তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর জানতে পারেননি। ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিমল কান্তি দে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলী এবং রাজিবপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুস সবুর ফারুকীর সহায়তায় তাকে খুঁজে বের করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে বীরপ্রতীক খেতাবের পদক তুলে দেওয়া হয়।
বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দুজন নারীর মধ্যে একজন হচ্ছেন তারামন বিবি।
মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবি ১১ নম্বর সেক্টরে নিজ গ্রামে ছিলেন। তখন ১১ নম্বর সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালানো শেখান। এরপর একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারামন অনেক সন্মুখযুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। এ কারণে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব দেয়।
তারামন বিবির ছেলে আবু তাহের জানান, ‘আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিজ উদ্যোগে পারিবারিকভাবে রাজীবপুরের বাড়িতে বাদ মাগরিব মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছি।’
রাজিবপুরের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘বীর প্রতীক তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই।’
এ বিষয়ে রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত চক্রবর্তী বলেন, ‘বীরপ্রতীক তারামন বিবির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। আমি নিজ উদ্যোগে বাদ জোহর তার বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছি।’