বেসরকারি পর্যায়েও জ্বালানি তেল আমদানি করা যাবে : জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সরকারের পাশাপাশি এখন থেকে বেসরকারি পর্যায়েও জ্বালানি তেল আমদানি করে ভোক্তার কাছে বিক্রি করা যাবে। এ জন্য সরকার দাম নির্ধারণ করে দেবে। আগামী জুনে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবন মিলনায়তনে আজ শনিবার ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ‘জ্বালানি রূপান্তর : বৈশ্বিক প্রেক্ষিত এবং বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
নসরুল হামিদ বলেন, বেসরকারি খাতে কেউ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে চাইলেও পারবে। আগামী জুনে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুধু ডিজেলচালিত কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র রাখা হবে। জ্বালানি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী হতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতেও সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে যুক্ত করা হবে।
বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়া আশীর্বাদ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে বারবার দরপত্র ডাকা হলেও গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিদেশি কোম্পানি আসতে চাইত না। মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপস কাজ শুরু করেও চলে গেছে। তারা এটিকে ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক মনে করেনি। এখন গ্যাসের দাম বাড়ায় অনেকেই সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, নিজস্ব গ্যাস আহরণে গত ৬ থেকে ৭ মাস ধরেই নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে দিনে অন্তত ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। এ ছাড়া সম্পদ মজুত রেখে আমদানি করাটা যৌক্তিক হতে পারে না। তাই আগামী বছরের শুরুতেই ভোলার গ্যাস বাইরে আনা হবে। দুই বছর পর পর মহাপরিকল্পনা সংশোধন করতে হবে।
বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, নির্মাণাধীন, পরিকল্পনামতো অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রই গ্যাসভিত্তিক। গ্যাস থেকে মনোযোগ সরিয়ে অন্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে যেতে হবে। সামনের মহাপরিকল্পনায় এটা গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া রুফটপ সোলারকে (ছাদে সৌরবিদ্যুৎ) আন্দোলনে রূপান্তর করতে হবে।
সেমিনারে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম। তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে গতি বাড়াতে হবে। জ্বালানি ঘাটতির জন্য দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে দেওয়া ঠিক হবে না। শুধু বর্তমান সংকটের ওপর ভিত্তি করে নয়, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের প্রক্ষেপণ করে পরিকল্পনা করতে হবে।
ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, একসময় ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো গ্যাস থেকে। এখনো ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে গ্যাস থেকে। দেশে গ্যাসের মজুত দ্রুত কমে আসছে।
নতুন গ্যাস পাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকার পরও দেশে গ্যাস নেই বলে একটি ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশে গ্যাসের যে সম্ভাবনা আছে, তা কাজে লাগাতে পারলে অনেক সমস্যা কমে যাবে। দেশে গ্যাসের অভাব হবে না।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান।