ব্যথার ওষুধ ‘এলোমেলোভাবে’ না খাওয়ার পরামর্শ বিএসএমএমইউর উপাচার্যের
ব্যথা নিরাময়ের জন্য ‘এলোমেলোভাবে’ ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
আজ রোববার সকালে বিএসএমএমইউ-তে ‘লো ব্যাক পেইন’ শীর্ষক সেমিনারে উপাচার্য এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লকের মিলনায়তনে ফিজিক্যাল মেডিসিন, রিউমাটোলজি বিভাগ ও নিউরোসার্জারি বিভাগ যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে।
উপাচার্য বলেন, ‘নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ ছাড়াও ব্যথা নিরাময়ে রেডিয়েশন, হিট থেরাপি দেওয়া যেতে পারে। শেষে অপারেশেনের মাধ্যমে এ ব্যথা দূর করা হয়। অর্থাৎ কোমর ব্যথা নিরাময়ে শরীর চর্চা, নির্দিষ্টমাত্রার ওষুধ প্রয়োগ এবং সর্বশেষ অপারেশন করে লো ব্যাক পেইন প্রতিকার করা যায়। তবে নিয়ম-কানুন মেনে ব্যথা নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
এ জন্য প্রয়োজনে ফিজিক্যাল মেডিসিন, রিউমাটোলজি ও নিউরোসার্জারির মতো বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দেন উপাচার্য। আর প্রয়োজন হলে এমআরআই, সিটিস্ক্যান করে কোনধরনের চিকিৎসা লাগবে সেটি নির্ধারণ করা যায় বলেও জানান এই চিকিৎসক।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘অনেকের হাঁটতে গেলে, চলতে গেলে ব্যথা হয়। কারও পিঠে ব্যথা, কারও কোমরে ব্যথা হয়। কেউ নিচু হয়ে কিছু তুলতে গেলেও এমন ব্যথা হয়; যাতে তাকে সারা দিন শুয়ে থাকতে হয়। ব্যথার কারণে অনেকের মাসখানেক শক্ত বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। চেয়ারে বসে কাজ করতে গেলে অনেকে পিঠে ব্যথা অনুভব করেন।’
এসব ব্যথা তিনটি কারণে হয়ে থাকে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘পিএলআইডি বা লাম্বার ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক প্রল্যাপস, স্পাইনাল স্টোনোসিস, হার্নিয়েশন অব লাম্বার ডিস্কে ইনজুরি হলে এসব মিলে লো ব্যাক পেইন হতে পারে। এ ছাড়াও কোমরসহ মাসলে আঘাত লাগলেও ব্যথা হতে পারে। এমন ব্যথা নিরাময়ে নিচু হয়ে ভারী কিছু তোলা যাবে না। সেই সঙ্গে শরীরের ওজন যেন বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর শক্ত বিছানায় শোয়ার অভ্যাস করতে হবে। এসব মেনে চললে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে।’
সেমিনারে জানানো হয়, বেশির ভাগ মানুষের কোমরের ব্যথাই সাধারণ। কোমর ব্যথার শতকরা ৯০ ভাগ রোগীরই বিশ্রাম এবং কায়িকশ্রম করলে ভালো হয়ে যায়। অধিকাংশ কোমর ব্যথা নিয়মকানুন মানার মাধ্যমে প্রতিকার করা সম্ভব। এর বাইরে মেডিকেল ম্যানেজমেন্ট ও ফিজিক্যাল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমেও অধিকাংশ কোমর ব্যথার প্রতিকার সম্ভব।
ব্যথা নিরাময়ে স্টোরয়েড প্রয়োগ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, স্টেরয়েড শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোলোনস্কোপি ও আলট্রাসাউন্ড গাইডেড ইন্টারভেনশন করা হয়। এর ফলে অপারেশন এড়ানো যায় এবং রোগীরা আর্থিক দিক থেকেও লাভবান হন।’
সেমিনারে কি-নোট স্পিকার হিসেবে নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘কোমরের ব্যথার সঙ্গে পায়ের ব্যথা থাকলে পায়ের শক্তি কমে যায়, প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়; তখন এটিকে বলি আমরা রেড-ব্ল্যাক সাইন। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোমরের ব্যথার অধিকাংশই ডিস্ক প্রল্যাপসই হয়ে থাকে।’
এই চিকিৎসক বলেন, ‘কোমরে আঘাত পাওয়া, টিউমরার বা বয়স্ক লোকদের কোমরে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হতে পার। কোমর ব্যথা নির্ণয়ের জন্য রেডিওলজি বিভাগে এমআরআই, সিটি স্ক্যান করে যদি দেখা যায়, নার্ভে চাপ দিয়ে আছে, স্পাইনাল কর্ডে চাপ দিয়ে আছে সেটি হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরোস্পাইনাল সার্জারি বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে। মেরুদণ্ডের যেকোনো ধরনের অপারেশনের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেই এর সমাধান করা সম্ভব।’
সেমিনারে নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, রিউমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আরিফুল ইসলাম, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তরিকুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সেমিনারের প্যানেল এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশররফ হোসেন, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু সালেক, নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী ও সেন্ট্রাল সাব কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিক প্রমুখ।