ভাঙন আতঙ্কে তিস্তাপাড়ের লোকজন
কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় শুরু হয়েছে ভাঙন। গত বছরের মতো এবারও গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্কুলের শিশুদের অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা।
তিস্তা নদীর ভাঙনের কবল থেকে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চর দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রক্ষা করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আকুতি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিদ্যালয়টি দ্বিতীয়বারের মতো ভাঙনের কবলে পড়তে যাচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম চলমান থাকলেও আতঙ্কে রয়েছেন সেখানকার শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন হয়ে বহমান তিস্তা এখন পানিতে থৈ থৈ। নদীর বুকে শো শো করে পানি বয়ে যাচ্ছে। পানির তোড়ে ভাঙতে শুরু করেছে নদীর তীর। এতে করে এ ইউনিয়নের দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পড়েছে এখন হুমকির মুখে। বিদ্যালয়ের উত্তরপাশে মাত্র ১৫-১০ ফুট অংশ ভাঙলেই তিস্তা নদীর পেটে চলে যাবে বিদ্যালয়টি।
স্থানীয়রা জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রক্ষায় গেল বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে প্রায় ১৭ হাজার জিওব্যাগ ফেলেছিল। এক বছরের মধ্যেই জিওব্যাগগুলো দেবে গিয়ে বিদ্যালয় ভবনটি আবারও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। শুধু তাই নয়, পূর্বদিকে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালেও বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছিল। পরে স্থান পরিবর্তন করে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়া গ্রামে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছরের ব্যবধানে ফের বিদ্যালয়টি ভাঙনের মুখে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে চারদিকে পানি থাকায় শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করছে।
নদীভাঙনের শিকার স্থানীয় বাসিন্দা গণি মণ্ডল বলেন, ‘এখন ভাঙন ঠেকাতে না পারলে যে কোনো সময় বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ভাঙন যখন একটু দূরে ছিল তখন উদ্যোগ নিলে হয়তো বিদ্যালয়টি এত ঝুঁকিপূর্ণ হতো না। এখন ভাঙন কাছে আসার পর বালুর বস্তা ফেলার নামে সরকারি টাকা পানিতে ফেলা হচ্ছে।’
চর গাবুড়াতে তিস্তা নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে বিলীন হয়েছে বিদ্যালয়সংলগ্ন খয়বর হোসেন, গনি মণ্ডল, মকবুল হোসেন, জাফর আলী, ছামাদ আলী, কফের উদ্দিন, ছমের আলী, সজব উদ্দিন, আনিছুর রহমানসহ বেশ কয়েক জনের বসতবাড়ি। এই গ্রামের তিন ভাগের দুইভাগ অনেক আগেই বিলীন হয়েছে তিস্তার পেটে। বাকি অংশও ভাঙনের কবলে পড়ে ছোট হয়ে আসছে। এবছরেও নতুন করে আবার ভাঙন শুরু হওয়াতে সবাই এখন আতঙ্কিত।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ছামাদ আলী বলেন, ‘আমাদের দিকে কেউ দেখে না। সময় মতো আগে উদ্যোগ নিলে প্রতিবছর এত ক্ষতি হতো না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতার কারণে আমরা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছি। গত পাঁচ বছরে এই গ্রামের প্রায় ২৫-৩০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে দুটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও বাঁধের পূর্বের গ্রামগুলো রক্ষা পাচ্ছে না। এখন নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় গাবুড়া স্কুলটি বিলীন হওয়ার পথে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, ‘জিওব্যাগ ফেলে বিদ্যালয়টি রক্ষার চেষ্টা চলছে। তবে সিসি ব্লকের ব্যবস্থা করা গেলে স্কুলটি স্থায়ীভাবে রক্ষা করা সম্ভব। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে বিদ্যালয়টি যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। এর আগে ২০১৭ সালে পূর্ব শিবদেব চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দ্বিতল ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে তিস্তার কোলঘেষা চর দক্ষিণ গাবুড়াতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় বিদ্যালয়টি আবারও হুমকির মুখে পড়েছে।’
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ শামসুল আরেফীন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ‘পানি বৃদ্ধি হওয়াতে ভাঙন আতঙ্ক বেড়েছে। আমরা খোঁজখবর রাখছি। বিদ্যালয়টি রক্ষায় জিওব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভাঙন রোধে সিসি ব্লকের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’