ভারতীয় প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন যুবক
ভারতীয় প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে অপহরণের হাত থেকে রক্ষা পেলেন আবদুর রহমান অঙ্কন নামের ঢাকার এক ব্যবসায়ী। তবে নিজে রক্ষা পেলেও নগদ টাকা ও মোবাইলসহ খোয়া গেছে সাথে থাকা মূল্যবান মালামাল। ঢাকার এ ব্যবসায়ীকে অপহরণের চেষ্টার ঘটনায় মোংলা বন্দরের ৫ নিরাপত্তা প্রহরীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বন্দর এলাকার বাসস্ট্যান্ড থেকে অপহরণের জন্য ব্যবসায়ীকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে উঠানোর সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত দুজনকে আটক করতে পারলেও ভারতীয় প্রেমিকাসহ অন্যান্যরা পালিয়ে যায়।
মোংলা থানায় দায়ের হওয়া মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মোহাম্মদপুর কাটাসুর এলাকার আবদুল মান্নান মিয়ার ছেলে স্টেশনারী ব্যবসায়ী আবদুর রহমান অঙ্কনের (২৮) সাথে দেড় বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও এলাকায় দিপু বাইনের মেয়ে পিয়াঙ্কা বাইনের (২৮) সাথে। তারপর তাতে দীর্ঘদিনের আলাপচারিতায় ভারতীয় ওই নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চলতি বছরের গত ১৪ এপ্রিল ভালোবাসা দিবসে দুজনের সাথে প্রথম দেখা হয় খুলনার সোনাডাঙ্গায়। সোনাডাঙ্গার ৬ নন্বর রোডের একটি আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দুজনে প্রায় ৫ দিন সেখানে থাকেন। সেখান থেকে ভারতীয় ওই নারী নিজ দেশে চলে গেলে তাদের সম্পর্ক অটুট থাকে। দুইজনের মধ্যে যোগাযোগ থাকে প্রতিনিয়িত। দ্বিতীয় বার ওই একই আবাসিক হোটেলে দেখা করার জন্য ঢাকা ও ভারত থেকে এসে পূর্ব পরিচয় অবস্থান করেন তারা। একই সাথে মোংলা বন্দরের নিরাপত্তা প্রহরী জাফরের সাথেও সুসম্পর্ক রয়েছে ওই ভারতীয় নারী পিয়াঙ্কা বাইনের। দুজনে মিলে ঢাকার ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা।
সর্বশেষ শুক্রবার ওই ব্যবসায়ীর সাথে দেখা করার জন্য পিয়াঙ্কা বাইন মোংলায় আসে। তাকেও এখানে আসতে বলে। শুক্রবার দুপুরে প্রেমিক অঙ্কন মোংলায় এসে প্রেমিকা প্রিয়াঙ্কার সাথে দেখা করে। তবে সেখানে আগে থেকেই বন্দরের ৫ নিরাপত্তা কর্মচারীসহ কয়েকজন যুবক ব্যবসায়ীকে অপহরণের জন্য প্রস্তুত করে রাখে প্রেমিকা পিয়াঙ্কা ও জাফর। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সুন্দরবন দেখানোর কথা বলে সুকৌশলে একটি জালিবোর্ট (নৌযান) ভাড়া করে জাফর। এ সময় অন্যান্যদের সাথে নিয়ে নৌযানে করে বন্দরের পশুর নদীর মাঝ পথে নিয়ে তাকে হাত-পা বেঁধে মারধর শুরু করে এবং ব্যবসাযীকে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে অপহরণকারীরা। এছাড়া ব্যবসায়ীর সাথে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ও মানিব্যাগসহ অন্যান্য মালামাল ছিনিয়ে নেয় মোংলা বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীসহ ঢাকার মুন্সীগঞ্জ জেলার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে জামাল হোসেন (২৫), জাফর (২৬), দুলাল (২৫), তারভির (২৭) ও আখিরুল (২৫)।
বিষয়টি নদীতে অন্যান্য নৌযান কর্মীরা দেখে ফেলায় সেখান থেকে দ্রুত তাকে বাস স্ট্যান্ডে নিয়ে জোরপূর্বক একটি মাইক্রোবাসে উঠানোর চেষ্টা করে অপহরণকারীরা। এ সময় ব্যবসায়ী অঙ্কনের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাকে রক্ষা করে এবং পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। এ সময় ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বন্দরের নিরাপত্তা প্রহরী জামাল হোসেন ও বোটচালক ওবায়দুর হোসেনকে আটক করে পুলিশ। কিন্ত কৌশলে ভারতীয় প্রেমিকা পিয়াঙ্কা বাইন ও অন্যান্যরা সেখান থেকে পালিয়ে যান। শুক্রবার রাতে বন্দরের ৫ নিরাপত্তা প্রহরী, বোটচালক ও ভারতীয় প্রেমিকা পিয়াঙ্কা বাইনকে আসামি করে মোংলা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। শনিবার দুপুরে আটক দুইজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রেমঘঠিত বিষয়ে ঢাকার ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনায় বন্দরের কয়েকজন নিরাপত্তাপ্রহরী জড়িত রয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। এছাড়া ভারতীয় প্রেমিকা ও বন্দরের ৫ নিরাপত্তা প্রহরীসহ ৭জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর শনিবার দুপুরে আটক দুজনকে আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাট জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।