ভালো আছে কুড়িগ্রামের ববিতারা
কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলার চর সরদারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ববিতা বেগম। প্রতি বছরের বন্যায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েন। ভেসে যায় ঘরবসতি। সে সময় সরকারি-বেসরকারি নানা সাময়িক সহযোগিতা পেলেও আবারও কষ্টের জীবন শুরু হয়। তবে গত বন্যার পরে শুধু খাদ্য সহায়তা নয়, পেয়েছেন একটি ভেড়া ও বসতবাড়ির আশপাশে লাগানোর জন্য শাক-সবজির বীজ।
এক বছরের মধ্যে ভেড়া লালন পালন করে তার ঘরে এখন চারটি ভেড়া। বিক্রি করছেন বাড়ির উঠোনের শাক-সবজি। সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা।
কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গা, পাঁচগাছি ও যাত্রাপুর ইউনিয়নে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এমন মানবিক সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের আটটি গ্রামের ২৪০ পরিবার। এ সহযোগিতা করেছে বেসরকারি সংগঠন ফ্রেন্ডশিপের ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্প।
সরদারপাড়া গ্রামের ববিতা বেগম জানান, তিনি এএসডি প্রকল্প থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের একটি ভেড়া পেয়েছেন। এখন তার চারটি ভেড়া, যার বাজারমূল্য ১৬ হাজার টাকা।
ববিতা আরও বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়িতে সবজি চাষ করি। এ বছর আট হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। যা আমার সাংসারিক ব্যয়ভার বহনে সহায়ক হচ্ছে এবং আমি সবজি বিক্রির টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কিনেছি।’
একই গ্রামের আহাদ আলী, সুমি বেগম, সাজিনা খাতুনসহ আরও অনেকে বলেন, আগে হাট থেকে সার কিনে আনতাম। এখন আমরা কম্পোস্ট সার তৈরি করে ব্যবহার করি। ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছি এবং গ্রামে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এএসডির প্রজেক্টের ম্যানেজার কৃষিবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গের সহায়তায় গ্রামের মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে। তাদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সম্পদবৃদ্ধি এবং সমাজে সুশাসন যেমন-বাল্যবিবাহ রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ, জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সম্পর্কে ধারণা, জিডি করার কৌশল ইত্যাদি শিক্ষামূলক আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনগোষ্ঠীর ভৌগলিক দুর্দশাগ্রস্ততা হ্রাসকরণ। স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলার মোট ২৪টি চরে ৭২১ পরিবারকে সহায়তা দিয়ে আসছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশন ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ২৪০টি পরিবারকে ভেড়া দিয়েছে এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে।
চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত, তাই এর মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হবে বলে আশাবাদী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।