ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে ১৭ ছাগল : অভিযোগ খামারির
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তার ভুল চিকিৎসায় এক খামারির ১৭টি ছাগল মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাননি।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের শেখ মাসুদ রানা পেশায় একজন ব্যবসায়ী। সম্প্রতি তিনি তাঁর নিজ বাড়িতে একটি ছাগলের খামার গড়ে তোলেন। পশু পালনের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জানার জন্য গত ২৯ আগস্ট তিনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে তিনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মমতাজুল হক সুজনের কাছে তাঁর ছাগলের খামারের কথা জানিয়ে পরামর্শ চান। এরপর ৩১ আগস্ট ডা. মমতাজুল ওই খামারে ছাগলগুলো দেখতে যান। দেখেশুনে ছাগলগুলোকে ভ্যাকসিন (কৃমি ও লিভার) দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শে খামারিও ভ্যাকসিন দিতে রাজি হলে ডা. মমতাজুল ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন।
এজন্য ওই কর্মকর্তা খামারির থেকে এক হাজার টাকা ‘ফি’ হিসেবে নেন বলেও অভিযোগ করেন খামারি।
এরপর ১ সেপ্টেম্বর সকালে ডা. মমতাজুল তাঁর অফিস থেকে ভ্যাকসিন দিতে প্রাণিসম্পদ দপ্তর পেড়িখালী ইউনিয়নের দায়িত্বরত প্রতিনিধি আলাউদ্দিন শেখকে খামারির বাড়ি পাঠান। ২ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আলাউদ্দিন শেখ ওই খামারির ১৭টি ছাগলকে সেই ভ্যাকসিন করেন। কিন্তু ছাগল প্রতি দুই সিসি ওষুধ চামড়ায় পুশ করার কথা থাকলেও তিনি তা মাংসের মধ্যে পুশ করেন। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর ওই দিন সকাল ৯টার পর থেকে ছাগলগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। খিচুনি ও লাফালাফি করে পরবর্তীতে নিস্তেজ হয়ে মারা যেতে শুরু করে ছাগলগুলো। ওই দিন সকালে থেকে রাত পর্যন্ত পাঁচটি, পরদিন সাতটি, এর পরদিন আরও দুটি ছাগল মারা যায়। এভাবে মোট ১৭টি ছাগল মারা যায়।
প্রথম দফায় পাঁচটি ছাগল মারা যাওয়ার পর খামারি মাসুদ আবারও ডা. মমতাজুলকে খবর দিলে তিনি এসে অসুস্থ ছাগলের মধ্যে দুইটির অবস্থা খারাপ দেখে সেগুলোকে জবাই দিতে বলে। তার সামনেই জবাই দেওয়ার পর সেখান থেকেও তিনি খাওয়ার কথা বলে এক কেজি মাংস নিয়ে যান।
একের পর এক ছাগলগুলো মারা যাওয়ায় খামারি মাসুদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কবীর হোসেন ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল হাসানের বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম খামারির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ করেছেন মাসুদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মমতাজুল হক সুজন বলেন, ‘তার ভুল চিকিৎসায় ছাগলগুলো মারা গেছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তবে যিনি (আলাউদ্দিন শেখ) ভ্যাকসিন পুশ করেছে সে চামড়ায় না করে মাংসে করাতে এমনটা হতে পারে। আমি চামড়ায় পুশ করতে বলেছি, মাংসে নয়। তারপরও বিষয়টি দেখতে হবে কেন এমন হলো। ভ্যাকসিনের মেয়াদ ঠিক ছিল কিনা এবং কী কারণে এমন হয়েছে তা উদঘাটন না করে বলা সম্ভব নয়।’
ফি হিসেবে এক হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ডা. মমতাজুল হক সুজন বলেন, ‘এমন সবাই আমাদের দেয়, তাই নিয়েছি।’
পেড়িখালী ইউনিয়নের প্রতিনিধি আলাউদ্দিন শেখ বলেন, ‘ইনজেকশন দিতে গেলে চামড়া ও মাংসে এদিক ওদিক হতে পারে। ওষুধে সমস্যা নাকি পুশে সমস্যা, নাকি ছাগলের কোনো রোগ ছিল তা পরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব না।’
ভুল চিকিৎসার বিষয়ে আলাউদ্দিন শেখ বলেন, ‘চিকিৎসা ভুল না সঠিক বুঝবো কিভাবে। মানুষের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দেওয়া হয়, আর পশুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ওষুধ দিতে হয়, দেখতে হয়। আমি পাঁচ বছর ধরে এই কাজ করি, আমার ভুল হওয়ার কথা না।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল হাসান বলেন, ‘এক ছাগলের খামারির একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি করা হবে। তারপর কমিটির সিদ্ধান্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’