মালামালসহ কার্গো জাহাজ উধাও, ধর্মঘটে স্থবির টেকনাফ বন্দর
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে মালবাহী একটি কার্গো জাহাজ উধাও ও পরে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধার হলেও সেই বোট থেকে চুরি গেছে পণ্য, উঠেছে এমন অভিযোগ। এ ঘটনায় বন্দরে চলছে ধর্মঘট। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের ডাকা এই ধর্মঘটে আজ রোববার (২৯ জানুয়ারি) পণ্য খালাস হয়নি, স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দর।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমার থেকে ৭০০ বস্তা সুপারি ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে জাহাজটি টেকনাফ স্থলবন্দরে আসে। সাদ্দাম হোসেন, ফারুক ও শওকত নামের তিন ব্যবসায়ী এই মালামাল নিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মালামালসহ কার্গো জাহাজটি বন্দরে এন্ট্রি করা হয়।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ওই দিন রাতেই মালামালসহ বন্দরের ঘাট থেকে কার্গো জাহাজটি উধাও হয়ে যায়। পরের দিন নাফ নদী থেকে ৫৭৪ বস্তা সুপারি ও ৮০ বস্তা কপিসহ একটি কার্গো জাহাজ পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের বিজিবির সদস্যরা পরে মামলা দিয়ে পণ্যসহ কার্গো জাহাজটি টেকনাফ শুল্ক গুদামে জমা দেয়।
এ ঘটনাকে অন্যায় দাবি করে বন্দরের ব্যবসায়ী ও আমদানি প্রতিষ্ঠানসহ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আজ সকাল থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয়।
এমন পরিস্থিতিতে বিকেলে স্থলবন্দরে উপজেলা প্রশাসন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে বৈঠকে বসে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, উধাওয়ের রাতেই ওই কার্গো জাহাজ থেকে শতাধিক বস্তা সুপারি চুরি হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ রোববার বিকেল পর্যন্ত বন্দরে মিয়ানমার থেকে ৩৫টি মালামাল বোঝাই কার্গো জাহাজ মালামাল খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব জাহাজে কোটি কোটি টাকার পচনশীল পণ্য রয়েছে।
স্থলবন্দরের কাস্টমস সুপার লুৎফর হক বলেন, ‘আজ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মবিরতি পালন করায় কাজ বন্ধ রয়েছে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফ স্থলবন্দর অন্যদিন পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের দখলে থাকলেও আজ সেখানে খা খা করছিল। জেটিগুলো খালি পড়ে ছিল। সেখানে নোঙর করে থাকতে দেখা গেছে পণ্যভর্তি একাধিক কার্গো ট্রলার ও জাহাজগুলোকে।
টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘বন্দরের জেটি ঘাট থেকে মালামালসহ কার্গো জাহাজ উধাও হওয়ার ঘটনা সত্যিই উদ্বেগের। এ ঘটনায় মিয়ানমারের আকিয়াবের ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানিতে শঙ্কা প্রকাশ করছে। বৃহস্পতিবার পণ্যসহ কার্গো জাহাজ উধাও হয়ে গেলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
পণ্য আমদানিকারক সাদ্দাম হোসেন জানিয়েছেন, টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পণ্যসহ কার্গো জাহাজ উধাও হয়েছে। এমনকি, সেখান থেকে শতাধিক বস্তা সুপারি ও অন্যান্য মালামাল চুরি হয়েছে। এতে করে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আনসার মো. কাওসার জানান, পণ্যবাহী একটি কার্গো বোট উধাওয়ের ঘটনায় টেকনাফ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হবে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের ধর্মঘট নিরসনের জন্য প্রশাসনসহ সকল পক্ষ নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, টেকনাফ স্থলবন্দর ব্যবহারকারীসহ সব পক্ষদের নিয়ে সভা হয়েছে। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা চলছে। শিগগিরই বন্দরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
উখিয়া টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য ও টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান বদি জানান, টেকনাফ স্থলবন্দর নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের একটা চক্র ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে সম্প্রতি উঠে পড়ে লেগেছে। আগামী রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোই এই চক্রের লক্ষ্য।
আব্দুর রহমান বদি আরও বলেন, ‘বন্দরের জেটি ঘাট থেকে মালামালসহ কার্গো জাহাজ উধাও এবং পণ্য চুরির ঘটনা রহস্যজনক। আজ রোববার স্থলবন্দরে ধর্মঘট হওয়ায় সরকার চার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলো। আমি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’