মুজিব সাহসী নেতা, দৃঢ়চেতা মানুষ : মোদি
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানে একজন সাহসী নেতা, একজন দৃঢ়চেতা মানুষ, একজন ঋষিতুল্য শান্তিদূত, একজন ন্যায়, সাম্য ও মর্যাদার রক্ষাকর্তা, একজন পাশবিকতাবিরোধী এবং যে কোনো জোর-জুলুমের বিরুদ্ধে একজন ঢাল।’
আজ মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষের’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক ভিডিওবার্তায় একথা বলেন মোদি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সমগ্র বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ভারতীয় ভাই-বন্ধুদের পক্ষ থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভকামনা।
মোদি বলেন, শেখ হাসিনা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে এই ঐতিহাসিক সমারোহে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসজনিত কারণে আমার পক্ষে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। পরে শেখ হাসিনা নিজেই একটি বিকল্প প্রস্তাব দেন এবং সে কারণে আমি এই ভিডিওর মাধ্যমে আপনার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই গুণাবলী সেসময় লাখ লাখ তরুণকে বাংলাদেশের মুক্তির জন্য সমস্ত প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে নতুন শক্তি দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, আজ আমার খুব ভালো লাগে, যখন দেখি যে বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রিয় দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলায়’ রূপান্তরিত করার জন্য দিন-রাত কাজ করে চলেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের জন্য এক মহান বার্তা। আমরা সবাই ভালো করে জানি, কীভাবে একটি নিপীড়ক ও দমনকারী সরকার সমস্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ উপেক্ষা করে ‘বাংলা ভূমির’ উপর অবিচারের রাজত্ব চালিয়ে জনগণের সর্বনাশ করেছিল। সেসময় যে ধ্বংসলীলা ও গণহত্যা হয়েছিল, সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে বের করে এনে একটি ইতিবাচক ও প্রগতিশীল সমাজে পরিণত করার জন্য তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসর্গ করেছিলেন।
‘তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ঘৃণা এবং নেতিবাচকতা কখনই কোনো দেশের উন্নয়নের ভিত্তি হতে পারে না। কিন্তু তাঁর এই ধারণা ও প্রচেষ্টা কিছু লোক পছন্দ করেনি এবং আমাদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ এবং আমরা সবাই ভাগ্যবান যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ঈশ্বরের আশীর্বাদে রক্ষা পেয়েছিলেন। নয়তো সহিংসতা ও ঘৃণার সমর্থকরা চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি।’
মোদি বলেন, ‘আতংক ও সহিংসতাকে রাজনীতি এবং কূটনীতির হাতিয়ার করে তোলা কীভাবে একটি সমাজ ও জাতিকে ধ্বংস করে দেয় তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। সন্ত্রাস ও সহিংসতার সমর্থকরা আজ কোথায়, কীভাবে আছে এবং বাংলাদেশ কোন উচ্চতায় আছে এটাও বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ যেভাবে অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং উন্নয়নমুখী নীতিমালা অনুসরণ করে এগিয়ে চলছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। অর্থনীতি থেকে শুরু করে অন্য সামাজিক সূচক, যেমন : ক্রীড়াক্ষেত্র কিংবা দক্ষতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ক্ষমতায়ন, মাইক্রো ফিন্যান্সের মতো অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে।’
ভিডিওবার্তায় মোদি বলেন, আমি আনন্দিত যে, গত ৫-৬ বছরে ভারত এবং বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি সোনালী অধ্যায় রচনা করেছে এবং আমাদের অংশীদারিত্বকে নতুন মাত্রা এবং দিশা দিয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আস্থার কারণেই আমরা স্থল ও সমুদ্রসীমানার মতো জটিল সমস্যাগুলি সহজে সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি।
‘আজ বাংলাদেশ কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার নয়, উন্নয়ন অংশীদারও। ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ বাড়িঘর এবং কারখানা আলোকিত করছে। ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। সড়ক, রেল, বিমান, জলপথ বা ইন্টারনেট এমন অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা দুই দেশের মানুষকে আরো বেশি সংযুক্ত করছে।’
মোদি বলেন, ‘আমাদের যৌথ ঐতিহ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, লালন শাহ, জীবনানন্দ দাশ ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মনীষীরা। বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার ও অনুপ্রেরণা আমাদের এই ঐতিহ্যকে আরো বিস্তৃত করেছে। তাঁর আদর্শ ও মূল্যবোধের সঙ্গে ভারত সর্বদা সংযুক্ত ছিল। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে এই অভিন্ন ঐতিহ্যের ভিত্তিতে।’
আমাদের এই ঐতিহ্য, আত্মিক বন্ধন, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ, এই দশকেও দুই দেশের অংশীদারিত্ব, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির এক শক্তিশালী ভিত্তি বলে উল্লেখ করেন মোদি। তিনি বলেন, ‘আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হবে এবং তার পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী। আমার বিশ্বাস যে, এই দুটি মাইলফলক কেবল ভারত এবং বাংলাদেশের উন্নয়নকেই নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে না, দুদেশের বন্ধনকেও জোরদার করবে।’