মেজর সিনহা হত্যা : ১১ মাস পর কনস্টেবল সাগরের আত্মসমর্পণ
কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ও পলাতক আসামি বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।
ঘটনার ১০ মাস ২৫ দিন পর আজ বৃহস্পতিবার টেকনাফ থানার সাবেক এই কনস্টেবল অনেকটা চুপিসারে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। জামিনের পরবর্তী সময়ে শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন রেখেছেন আদালত।
একইদিন এই মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য শুনানির দিন নির্ধারিত রয়েছে। এদিন ওসি প্রদীপ ও এএসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের জামিনের শুনানিও হবে। গত ১৩ জুন এই দুই আসামি জামিনের আবেদন করেছিলেন। তার আগে গত ১০ জুন ওসি প্রদীপকে চট্টগ্রাম জেলা কারাগার থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে নিয়ে আসা হয়।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, কনস্টেবল সাগর মেজর হত্যামামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। আজ তিনি অ্যাডভোকেট দিলীপ দাশের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন করেন।
কনস্টেবল সাগর দেবের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই এখন কারাগারে। একমাত্র তিনিই পলাতক ছিলেন। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ সাগরকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানাও জারি করেছিলেন আদালত।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান।
হত্যার পাঁচদিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার তাঁর বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে।
এরপর আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিনজন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করে (র্যাব)। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডটিকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ জন আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন। আজ কনস্টেবল সাগর দেবকে কারাগারে পাঠান আদালত।
কারাগারে থাকা অন্য ১৪ আসামি হলো—বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
এ ছাড়া ঘটনার সময় মেজর সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা যে নীলিমা বিচ রিসোর্টে ছিলেন, সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নূরকে আটক করে। পরে তাহসিন রিফাত নূরকে অভিভাবকের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শিপ্রা দেবনাথকে রামু থানায় করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। আর সিফাতকে টেকনাফ থানায় করা হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার দুটি মামলা ও রামু থানায় করা মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সিফাত, শিপ্রা ও তাহসিন বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তাঁদের নিয়ে সিনহা মো. রাশেদ খান একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কক্সবাজারে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিলেন।
৯ আগস্ট শিপ্রা ও ১০ আগস্ট সিফাতের জামিন মঞ্জুর করেন কক্সবাজারের আদালত। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। পরে ১৩ ডিসেম্বর এই দুই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বিমান চন্দ্র কর্মকার রামু ও টেকনাফ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের দায়ের করা দুই মাদক মামলার সত্যতা পাওয়া যায়নি।