রাজশাহী মেডিকেলের করোনা ইউনিটে আরও ১০ জনের মৃত্যু
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিন জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। এ ছাড়া ছয় জনের মধ্যে করোনার উপসর্গ ছিল। অপর একজনের নমুনা পরীক্ষার পর ফলাফল নেগেটিভ আসে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
শামীম ইয়াজদানী বলেন, আজ শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা ইউনিটে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রাজশাহীর পাঁচজন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচজন রয়েছেন। মৃত ১০ জনের মধ্যে দুজন মারা গেছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। এ ছাড়া কেবিনে একজন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে একজন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে তিন জন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে একজন ও ১ নম্বর ওয়ার্ডে একজন মারা গেছেন। মৃত ১০ জনের মধ্যে পুরুষ আটজন ও নারী দুজন। এর মধ্যে ৬১ বছরের ঊর্ধ্বে ছিলেন ছয় জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে একজন এবং ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। করোনা পজিটিভ হয়ে যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা সবাই রাজশাহীর বাসিন্দা। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে দুজন রাজশাহীর ও চারজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা। করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে যে একজনের মৃত্যু হয়েছে, তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৪৬ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৮ জন। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউয়ের ২০টি ও কেবিনের ১৫টি শয্যাসহ ৯টি করোনা ওয়ার্ডে ৩০৯ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৬৫ জন। এর মধ্যে আইসিইউয়ের ২০টি শয্যায় ২০ জন, কেবিনের ১৫টি শয্যার বিপরীতে ১৬ জন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬টি শয্যার বিপরীতে ১৭ জন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৮টি শয্যায় ৪৮ জন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি শয্যার বিপরীতে ৪০ জন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩২টি শয্যার বিপরীতে ৪৩ জন, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১০টি শয্যার বিপরীতে আটজন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি শয্যার বিপরীতে ৪৩ জন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি বেডের শয্যার ৪৫ জন, ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬টি শয্যার বিপরীতে ৪৪ জন এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬টি শয্যার বিপরীতে ৪১ জন রোগী ভর্তি আছে। যেসব ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে, সেসব রোগীদের ওই ওয়ার্ডের মেঝে অথবা বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রামেক হাসপাতালের দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী ও নওগাঁর ৫৬৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং নওগাঁয় শনাক্তের হার ৪২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এদিকে, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে রাজশাহী মহানগর এলাকায় ১৪ দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের নবম দিন চলছে আজ শনিবার। লকডাউনের ফলে মহানগর এলাকায় ওষুধ ও কৃষিপণ্যের দোকান এবং জরুরি সেবার দোকানপাট ছাড়া সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কাঁচাবাজার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকছে। তবে সেখানে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের অফিস বন্ধ রয়েছে। জরুরি সেবা, রোগী পরিবহণ ও কাঁচামাল পরিবহণের সঙ্গে জড়িত যানবাহন ছাড়া মহানগর এলাকার সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে নানা অজুহাতে নগরীতে লোকজনের চলাচল বেড়েছে। বেড়েছে রিকশা ও অটোরিকশার চলাচলও।