রাজারবাগ পীরের বিরুদ্ধে উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগ সিটিটিসির
রাজধানীর রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমান ও তাঁর অনুসারীদের সম্পর্কে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)। এতে অভিযোগ আনা হয়েছে, নিষিদ্ধিঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) মতো ‘ভিন্ন মতাবলম্বী’ মানুষকে ‘কতল’ করা ‘ইমানি দায়িত্ব’ বলে নির্দেশ দিয়েছেন পীর দিল্লুর। তিনি তথাকথিত জিহাদের মাধ্যমে ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ কায়েমের জন্য মুরিদদের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছে সিটিটিসি।
আজ রোববার সিটিটিসির পক্ষ থেকে হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। রাজারবাগ পীরের অনুসারীদের দায়ের করা ৪৯ মামলার বাদীদের খুঁজতে ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের এবং অপর আটজনের দায়ের করা রিটে দেওয়া আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সিটিটিসি এই প্রতিবেদন জমা দেয়।
এ বিষয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি আজ হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও এমাদুল হক বশির।
অনুসন্ধানের পর তৈরি করা প্রতিবেদনে পীরের বিরুদ্ধে অভিযোগে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘সারা দেশে অসংখ্য খানকা, মাদ্রাসা, মসজিদসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে সহজ-সরল মানুষদেরকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তরবারের অনুসারী করার চেষ্টা করা হয়। আর এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার যে অভিযোগ উঠেছে তারও প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে।’
রাজারবাগ দরবারের নিয়ন্ত্রাধীন দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকা রয়েছে। এর বিভিন্ন সংখ্যা ও পীরের অনুসারীদের দায়ের করা মামলার তদন্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের কথা বলা হয়েছে সিটিটিসির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ‘তারা ইসলাম ধর্মের নামে এবং অনেক ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের খণ্ডিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে এ দেশের ধর্মভীরু মানুষকে ভুলপথে পরিচালিত করে ধর্মের নামে মানুষ হত্যা ও তথাকথিত জিহাদকে উসকে দিচ্ছে। নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের মতবাদ প্রচার করছে ও কার্যক্রম চালাচ্ছে রাজারবাগ দরবকার শরীফের পীর, তার সহযোগী ও অনুসারীদের কার্যক্রম জঙ্গিদের কার্যক্রমের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।’
‘ভিন্ন মতাবলম্বী ও ভিন্ন ধর্মের মানুষকে, তাদের ভাষায় মালাউনদেরকে হত্যা করা ইমানি দায়িত্ব উল্লেখ করে ফতোয়া দেওয়া হয়েছে এবং সেক্ষেত্রে কতল করার আদেশ দিয়েছে, যা মূলত বাংলাদেশে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের মানুষকে হত্যা করার ফতোয়ার অনুরূপ। এটি ইসলামের নামে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনসমূহের মতো একই প্রক্রিয়ায় বিরোধীদের অর্থাৎ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের হত্যা করার ও ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করার কৌশল। তাদের এ ধরনের বক্তব্য মানুষকে জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত করবে, অসহিঞ্চু করবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা নষ্ট করতে ভূমিকা রাখবে। তাদের প্রচার ও অন্যান্য কার্যক্রম মূলত এ দেশের হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তারা বিভিন্ন বক্তব্য ও ফতোয়া দিয়ে ধর্মভীরু ও সহজ-সরল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে’, যোগ করা হয় সিটিটিসির প্রতিবেদনে।
এতে আরও বলা হয়, রাজারবাগ দরবার শরীফ ‘এখনও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত না হলে তাদের বিভিন্ন প্রকাশনা, বক্তব্য, মুরিদ ও অনুসারীদের প্রতি নির্দেশনার ফলে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
একইসঙ্গে এসব বক্তব্য ও প্রচার জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের ‘লোন উলফ’ বা একাকী ধাঁচের হামলায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সিটিসিসি।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সারা দেশে পীরের পরিচালনাধীন প্রায় এক হাজার ৪০০ প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে দাবি করা হলেও অনুসন্ধানে রয়েছে মাত্র ৭৩টি।