রামেকের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনের মৃত্যু
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে পাঁচ জন ছিলেন করোনা পজিটিভ। অন্যরা মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন সময় তাঁদের মৃত্যু হয়।
এ ছাড়া রামেক হাসপাতালের পরিচালক আরও জানিয়েছেন, করোনা পজিটিভ হয়ে যে পাঁচ জন মারা গেছেন, তাঁদের দুজনের বাড়ি রাজশাহী, দুজনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং আরেকজনের বাড়ি নওগাঁয়।
এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মৃত ৯ জনের মধ্যে রাজশাহীর চার জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুজন, নওগাঁর দুজন এবং নাটোরের একজন।
চলতি মাসের ২৫ দিনে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ২৭৭ জন।
হাসপাতাল পরিচালক জানান, করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। এ ছাড়া তিন নম্বর ওয়ার্ডে তিন জন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে একজন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তিন জন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে একজন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে তিন জন এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন মারা গেছেন।
মৃতদের মধ্যে ৬১ বছর বয়সোর্ধ্বে চার জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের পাঁচ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের চার জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন।
হাসপাতাল পরিচালক জানান, আইসিইউ’র ২০টি শয্যা এবং কেবিনের ১৫টি শয্যা ছাড়াও হাসপাতালের ১০টি ওয়ার্ড এখন করোনা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড। সবমিলে করোনা ইউনিটে এখন শয্যা সংখ্যা ৩৫৭টি।
আজ শুক্রবার সকালে ৩৫৭ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিল ৪২৩ জন। বাড়তি রোগীদের ওয়ার্ডগুলোর মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে, সেখানেও তাদের অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালক জানান, যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন একদম নিচে নেমে গেছে অর্থাৎ যাদের অক্সিজেন দেওয়া প্রয়োজন, বর্তমানে হাসপাতালে শুধু সেসব করোনা রোগীকেই ভর্তি করা হচ্ছে। আর করোনায় আক্রান্ত যেসব রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন নেই, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে না। বাড়িতে রেখেই তাদের চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল পরিচালক আরও জানান, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬৫ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে যে ৪২৩ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ২৮৩ জনই রাজশাহীর। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬৪ জন, নাটোরের ৩১ জন, নওগাঁর ২৯ জন, পাবনার ৮ জন, কুষ্টিয়ার তিন জন, চুয়াডাঙ্গার দুজন, দিনাজপুরের একজন, ঢাকার একজন এবং একজন অন্য জেলার।
এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দুটি পিসিআর ল্যাবে সর্বশেষ ৫৬০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮০ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। শনাক্তের হার রাজশাহীতে ২৯ দশমিক ৭৫ এবং নওগাঁয় ৩৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে রাজশাহী মহানগর এলাকায় আগের ঘোষিত ২১ দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের আজ শুক্রবার ১৫তম দিনে দেখা গেছে সবকিছুতেই ঢিলেঢালাভাব। মহানগর এলাকায় ওষুধ ও কৃষিপণ্যের দোকান এবং জরুরিসেবার দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা থাকলেও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকায় মানা হচ্ছে না এ নিয়ম। সব ধরনের দোকানই খোলা রয়েছে। কাঁচাবাজার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকলেও সেখানে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। জরুরি সেবা, রোগী পরিবহণ ও কাঁচামাল পরিবহণের সঙ্গে জড়িত যানবাহন ছাড়া মহানগর এলাকার সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে দেশের নানা এলাকা থেকে নানাভাবে লোকজন মহানগর এলাকায় প্রবেশ করছে। নানা অজুহাতে নগরীতে লোকজনের চলাচল বেড়েছে। রিকশা ও অটোরিকশার চলাচলও রয়েছে স্বাভাবিক।