রাস্তার কুকুর-বিড়াল যার কাছে সন্তানের মতো!
‘আমার সন্তান নেই, সন্তান থাকলে তো তাদেরকেও খাবার খাওয়াতে হতো। তাই এগুলোকে সন্তান ভেবে খাবার দেই’, কথাগুলো বলছিলেন ১৩ বছর ধরে রাস্তার কুকুর-বিড়ালকে খাবার দিয়ে আসা মোংলার হালিমা বেগম।
৫৫ বছর বয়সী হালিমা বেগম মোংলা পোর্ট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বস্তিতে একাই থাকেন। পরিবারে আর কেউ না থাকায় নিজেই প্রতিদিন কোনোভাবে খাবারের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু, সেই খাবার তিনি ভাগাভাগি করে নেন রাস্তায় থাকা কুকুর-বিড়ালের সঙ্গে।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হালিমা মোংলা নদী পার হয়ে স্থায়ী বন্দর এলাকার পিকনিক কর্নারে চলে যান। সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে পিকনিকে আসা মানুষকে রান্নাসহ নানান কাজে সহায়তা করেন। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে কিছু খাবার পান হালিমা। প্রতিদিন সেই খাবারের কিছুটা তিনি খান, বাকিটা কুকুর ও বিড়ালকে নিজ হাতে খাওয়ান।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন পিকনিক কর্নারে কাজ শেষে রাত ৮টার দিকে বস্তিতে ফেরার পথেই হালিমা বেগমের পিছু নিতে শুরু করে কুকুর-বিড়ালগুলো। খাবার পাওয়ার আশায় উদ্বেলিত হয়ে পড়ে প্রাণিগুলো। পরে তিনি সড়কের একপাশে খাবারগুলো বের করে কুকুর-বিড়ালকে খেতে দেন। এভাবে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি কুকুর-বিড়ালকে সন্তানের মতো করে খাবার দেন তিনি।
হালিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী, সন্তান, বাপ-মা, ভাই-বোন কেউ নেই। খুব কষ্ট করে বেঁচে আছি। রাস্তার কুকুর-বিড়াল নিয়ে সময় কাটাই, খাবার দিই—কখনও ভাত-তরকারি, আবার কখনও শুধু সাদা ভাত; যখন যা পাই। সেগুলো পেট ভরে খায়।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী রতন মিয়া ও ফারুক হোসেন বলেন, হালিমা বেগম পিকনিক কর্নারে কাজ করে এবং অন্যের কাছ থেকে খাবার চেয়ে এনে কুকুর-বিড়ালগুলোকে খাওয়াচ্ছেন। তিনি অত্যন্ত যত্ন ও আদর করে এসব প্রাণীকে খাবার দেন। তার কাছে প্রাণীগুলো সন্তানের মতো। নিজের খাবার নিয়ে সমস্যায় থাকার পরেও তিনি প্রতিদিনই এই কুকুর-বিড়ালগুলোকে খাবার দেন। কুকুর-বিড়ালগুলোও খাবারের জন্য তার অপেক্ষায় থাকে।
হালিমা বেগম বলেন, ‘রাস্তার এসব কুকুর-বিড়ালকে সবাই লাথি-ঝাটা মারে। কেউ খাবার দেয় না। তাই, আমি রাস্তার এসব কুকুর-বিড়ালকে ১৩ বছর ধরে খাবার দিয়ে আসছি।’
‘এরা আমাকে দেখলে সন্তানের মতো ছুটে আসে। তাই, আমারও ভালো লাগে। এগুলোকে আমি সন্তানের মতো ভেবেই খাবার দেই’, যোগ করেন এই নারী।