রোববার আলোচনা, তার আগে ধর্মঘট উঠছে না

ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে একইসঙ্গে পণ্য ও গণপরিবহণ ধর্মঘট চলছে। এ কারণে শুক্রবার ভোর থেকে বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহণ না চলায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামে দাবি আদায় না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক ও শ্রমিক সমিতি।
অপরদিকে সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোববার সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হবে। তার পরই ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। অর্থাৎ আগামীকাল শনিবারও পণ্য ও গণপরিবহণ ধর্মঘট চলবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ আজ শুক্রবার রাতে এনটিভিকে বলেন, ‘আমরা তো সারা দেশের মালিকদের বাইরে নই। আমরা সারা দেশের মালিকদের সেন্টিমেন্টের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করি। আমরা তো কেন্দ্রীয়ভাবে ডাকিনি। মালিকদের নায্য দাবি সমাধান হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
‘এখন সরকার বুঝতে দেরি করতাছে, এই কারণে সমস্যা হচ্ছে। এখন রোববারে বসলে পরে সবকিছু সচল হবে। বৈঠকের আগে কী মেসেজে ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে। কোনো মেসেজ তো নেই। কোনো আলোচনা ছাড়া আমারা কীভাবে বলব’, যোগ করেন খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ।
গত বুধবার সরকার খুচরা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ডভ্যান ড্রাইভার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, করোনার কারণে গত দুই বছরে দীর্ঘ সময়ের জন্য গণপরিবহণ বন্ধ ছিল। এখন যখন পরিবহণ মালিকরা করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন, সরকার তখন সেতুর টোল এবং জ্বালানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার অথবা ভাড়া বাড়ানো না হলে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে বাস এবং পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।
যদিও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) লিটারপ্রতি ১৩ দশমিক শূন্য এক টাকা কম দামে ডিজেল এবং ছয় দশমিক ২১ টাকায় ফার্নেস অয়েল বিক্রি করায়, প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। প্রতি লিটারের বিক্রয়মূল্য, তাদের আমদানি করা দামের চেয়ে কম। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রলিয়ামের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দাম পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।’

এদিকে হঠাৎ করেই ধর্মঘট শুরু হওয়ায় রাজধানী ঢাকায় আজ সকাল থেকে যাত্রীবাহী বাস খুব একটা দেখা যায়নি। তবে, বিভিন্ন এলাকায় বিআরটিসির বাস চলতে দেখা গেছে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি ও বিপদে পড়েছেন চাকরিপ্রত্যাশিরা। তাঁরা সাভারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছেন।
অনেকে আবার রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, লেগুনায় করে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। তবে শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় অফিসগামী যাত্রীদের খুব একটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি।
কিন্তু আগামীকাল শনিবার। সরকারি বাদে প্রায় সব অফিস ও কারখানা খোলা। ফলে আগামীকালের ভোগান্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্মজীবীরা।