রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন : আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোয় জোর বিশেষজ্ঞদের
বাংলাদেশে গণহারে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশের চার বছরেও তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও, নানা কারণে তা থমকে গেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দিতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।
ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ফলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। নারী, পুরুষ ও শিশুরা সঙ্গে করে নিয়ে আসে অবর্ণনীয় অত্যাচারের কাহিনি। হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে যাওয়া মানুষজন তাদের বাড়িঘর ছেড়ে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসে।
মিয়ানমার সেনাদের গুলির মুখে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গারা।
১৯৭৮, ১৯৯২, ২০১৬ এবং সবশেষ ২০১৭ সালে চার দফায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় অবস্থান করা এসব রোহিঙ্গাদের গত বছরের ডিসেম্বরে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের কাজ শুরু করে সরকার। তবে, এত বছরেও মিয়ানমারে পাঠানো যায়নি রোহিঙ্গাদের।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের উচিত হবে—আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সঙ্গে আরও বড় আকারে কথা বলা, এমনকী রোহিঙ্গা ডায়াসপোরা, বাংলাদেশের গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ—সবারই উচিত হবে এই ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে মহামারিজনিত পরিস্থিতি যখনই ভালো অবস্থায় যাবে, তখনই যেন এই প্রত্যাবাসন এবং বিশেষ করে তাদের আইডেন্টিটি যেন দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে বড় আকারে মিয়ানমারের ওপর চাপ দেওয়া।’
মিয়ানমার সরকার ২০১৭ সালে ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। পরে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম বার এবং ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট দ্বিতীয় বারের মতো প্রত্যাবাসনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
শরণার্থী বিশেষজ্ঞ ড. রহমান নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত প্রথম দফা ও দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যেসব কারণে ব্যর্থ হয়েছে, সে কারণগুলো তুলে ধরতে হবে এবং সেগুলোর সমাধান বের করতে হবে। বিশেষ করে রাখাইনে যে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার প্রশ্ন রয়েছে, তা কী করে সমাধান করা যায়। এবং রাখাইনে রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে তারা তাদের যে বসতভিটা ফেলে এসেছে, তা ফিরে পাবে কি না, তা নিশ্চিত করার ব্যাপারটাও রয়েছে।’
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে তাদের নিরাপত্তাসহ বসতভিটা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
বিশ্ব ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সৃষ্ট বিশাল এক মানবিক সংকট প্রত্যক্ষ করে। সহিংস হামলার শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসে, যাদের গ্রামগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এর জেরে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে প্রবেশ করা মানুষের নজিরবিহীন এক ঢলের সূচনা ঘটে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের খোঁজে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির উদার সমর্থন এবং বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে বহুজাতিক সহায়তা প্রচেষ্টার কারণে সে সময় একটি মারাত্মক মানবিক সংকট এড়ানো সম্ভব হয়েছিল।