শাবিপ্রবির আন্দোলনে ‘আর্থিক সহায়তা’, রাজধানী থেকে আটক ৫
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল সোমবার রাজধানী বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের আটক করা হয়। পুলিশের দাবি, তাঁরা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার (সিএমপি) নিশারুল আরিফ এ তথ্য নিশ্চিত করে আজ মঙ্গলবার বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সিআইডি তাঁদের আটক করে সিএমপিতে হস্তান্তর করেছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
আটককৃতরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান স্বপন, রেজা নূর মুঈন দীপ, নাজমুস সাকিব দ্বীপ, মারুফ হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ।
নিশারুল আরিফ আরও বলেন, ‘যে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে তাঁরা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাঁরা সবাই শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়েছেন। বিকাশে টাকা পাঠিয়েছেন। শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করতে চেয়েছেন। সব মিলিয়ে তাঁদের আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের থেকে আমরা শুনেছি; ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা মোট সাড়ে সাত লাখ টাকা আন্দোলনে খরচ করতে দিয়েছেন। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হবে কি না, তা জানানো হবে।’
গতকাল বিকেলে রাজধানীর উত্তরা থেকে শাবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক ছাত্র হাবিবুর রহমানকে (স্বপন) আটক করে সিআইডি। তিনি বর্তমানে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় উত্তরা থেকে স্থাপত্য বিভাগের সাবেক ছাত্র রেজা নূর মুঈনকে আটক করা হয়। রেজা দেশের একটি খ্যাতনামা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে স্থপতি হিসেবে কাজ করছেন। বাকি তিনজনের নাজমুস সাকিব দ্বীপও স্থাপত্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তবে, তিনিসহ বাকি দুই সাবেক শিক্ষার্থীকে রাজধানীর কোন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি এনটিভি অনলাইন।
হাবিবুর রহমান স্বপন ও রেজার বন্ধু এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শাহ রাজী সিদ্দিকী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হাবিবুর রহমান আমার সঙ্গে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে তাঁদের বাসায় থাকেন। গতকাল সোমবার বিকেল তিনটার দিকে পুলিশ পরিচয়ে তিনজন হাবিবকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।’
‘পরে আমার মা হাবিবকে ফোন দেন। তখন হাবিব বলে, তাঁকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে আছে। সেখানে আমি গিয়ে দেখি আমার বন্ধু রেজা নূর মুঈন দীপও রয়েছে। পরে পুলিশের কাছে জানতে চাই, ওয়ারেন্ট আছে কি না। তখন পুলিশ জানায়, তাঁদের ওয়ারেন্ট লাগে না। তবে, সিআইডি জানায়, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ছোট ভাই-বোন আন্দোলন করছেন; তাঁদের আর্থিকভাবে বিকাশে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা। আমি হাবিব ও রেজার কাছ থেকেই শুনেছিলাম, তাঁরা এক হাজারের মতো টাকা দিয়েছিল শিক্ষার্থীদের’, যোগ করেন শাহ রাজী সিদ্দিকী।
শাহ রাজী সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘হাবিবের পারিবারিক অবস্থা ভালো নয়। মা-বাবা টাঙ্গাইলে থাকেন। গত রোববার তাঁর জার্মানিতে যাওয়ার ভিসা হয়েছে। সেখানকার একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে। রেজার বাবা মা অসুস্থ। ছোট একটি শিশু সন্তান রয়েছে।’
রেজা নূর মুঈন দীপের স্ত্রী জাকোয়ান সালওয়া তাকরিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। সেজন্য হয়তো কিছু আর্থিক সহযোগিতা তিনি করতে পারেন। করলেও সেটা হয়তো ২ থেকে ৩ হাজারের বেশি হবে না। এটা হয়তো ঠিক হয়নি, কিন্তু মানবিক কারণে করেছে। আমি এখন সিলেটে যাব। রেজা আর আমি একই বিভাগের। আমরা কখনও কোনো দলের রাজনীতি করিনি। আমরা সংগঠন করেছি, নাচ-গান করেছি। আমি চাই, পুলিশ তদন্ত শেষে তাঁকে ছেড়ে দিক। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি অসুস্থ। দুই বছরের তাইমুরকে রেখে আমাকে যেতে হচ্ছে সিলেটে।’
সিএমপির জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হুদা খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের আমরা বুঝে পাব। তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে সিআইডি তদন্ত করছে। তদন্তে আসা রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে পূর্বে ২০০ জনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে না।’