সফল চাষি মুজিবুর-স্বপ্না দম্পতি সবার প্রেরণার উৎস
সূর্যমুখী, ক্যাপসিকাম আর লেটুস পাতা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কৃষক মুজিবুর রহমান ও স্বপ্না দম্পতি। এই সফলতায় ওই অঞ্চলের কৃষকদের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন তাঁরা। আশপাশের অন্য কৃষকরাও এখন এসব মূল্যবান ও পুষ্টিকর ফসল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
কৃষক মুজিবুর রহমানের এসব ফসলের জমিতে প্রতিদিন ভিড় করছেন এলাকার দর্শনার্থীরা। অনেকে আবার বিনোদন পেতে ও দিতে ছুটে যাচ্ছে সেখানে। তুলছে ছবি, করছে ভিডিও; বানাচ্ছে টিকটক।
জানা যায়, ভৈরব উপজেলার হাওরাঞ্চল সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের কৃষক মুজিবুর রহমান ও কিষানি স্বপ্না বেগম তাঁদের ১০০ শতক জমিতে চাষ করেছেন সূর্যমুখী এবং বিদেশি সবজি জাতীয় ফসল ক্যাপসিকাম ও লেটুস পাতা। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো।
বাজারদর ভালো থাকায় ইতোমধ্যে প্রতিকেজি ক্যাপসিকাম ১৬০ থেকে ২০০ টাকা এবং লেটুসপাতা ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। ভৈরবসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে বেশ কিছু চাইনিজ রেস্তোরাঁ গড়ে উঠায় এই দুটি ভিনদেশি সবজির কদর বেশ তুঙ্গে।
অপরদিকে সূর্যমুখীর বীজ ২০০ টাকা কেজি দরে একটি সিড কোম্পানির সঙ্গে বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন কৃষক মুজিবুর রহমান। ফলন উঠানোর পর তারা এসে নিয়ে যাবে সেগুলো।
উচ্চমূল্য আর চাহিদার এই ফসল চাষে সফলতাসহ লাভবান হওয়ায় ওই এলাকার অন্য কৃষকদের আগ্রহ ও প্রেরণার উৎস এখন কৃষক মুজিবুর আর তাঁর স্ত্রী স্বপ্না বেগম। আশপাশের কৃষকরা প্রতিদিন তাঁদের জমিতে এসে চাষাবাদের আগ্রহ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে।
কৃষক মুজিবুর আর স্বপ্না দম্পতি জানান, এই তিন ফসলে তাঁদের খুব একটা শ্রম দিতে হয়নি। খরচও অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম হয়েছে। ১০০ শতক জমির ৭০ শতকের মধ্যে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। আর বাকি ৩০ শতকের মধ্যে এক সঙ্গে চাষ করেছেন ক্যাপসিকাম আর লেটুস পাতা। এতে তাঁদের মোট খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার মতো।
ফলন আর বিক্রির ধারাবাহিকতা দেখে কৃষক মুজিবুর রহমানের ধারণা কমপক্ষে দুই লাখ টাকা বিক্রি আসবে। এতে তাদের নিট মুনাফা হবে দেড় লাখ টাকা। যা এই সময়ের মধ্যে অন্য আর কোনো ফসল চাষে পাওয়া সম্ভব নয়।
এদিকে মুজিবুর আর স্বপ্না দম্পতির এই ব্যতিক্রমী চাষাবাদ, বিশেষ করে নয়নাভিরাম সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য দেখতে সেখানে প্রতিদিন ভিড় করছে অসংখ্য মানুষ। তাঁরা জমির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে, ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছে। কেউ বা তৈরি করছে টিকটক অথবা মিউজিক ভিডিও। ফলে এলাকাটি হয়ে উঠেছে বিনোদনকেন্দ্রও।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, উচ্চমূল্যের তিন ফসল চাষ করে কৃষক মুজিবুর রহমান সফল হয়েছেন। তাঁর এই সফলতায় কৃষি বিভাগ সব রকম পরামর্শ ও সহায়তা করেছে।
আকলিমা বেগম আশা প্রকাশ করে বলেন, মুজিবুর রহমানের সফলতায় আগ্রহী হয়ে অন্যান্য কৃষকরা আগামীতে এই জাতীয় ফসল চাষে এগিয়ে আসবে। এর ফলে ওই এলাকাসহ সমগ্র ভৈরবে এসবের আবাদ ছড়িয়ে পড়েবে।