সবাইকে নির্বাচনমুখী করতে চাই, চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করব। আমরা কতটা সৎ ছিলাম, কতটা দায়িত্ব পালন করেছি—সেটি পরে মূল্যায়ন করতে পারবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাইকে নির্বাচনমুখী করতে চাই। আমাদের তরফ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না।’
রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে আজ সোমবার দুপুরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিয়ম সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সিইসি।
এ সময় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এককভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারে না। আমাদের কনসার্ন যে এজেন্সিগুলো আছে, সবাই চেষ্টা করবে। এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, যেটাকে আমরা বলি পলিটিক্যাল লিডারশিপ অব দ্য কান্ট্রি, এর মানে আওয়ামী লীগ একা নয়। দেশে বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি মিলে একটি পলিটিক্যাল লিডারশিপ থাকে। এ লিডারশিপে কিন্তু একটা সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলব না, আমরা মাঠেই কথা বলব—তাহলে কিন্তু সমস্যা।’
সিইসি আরও বলেন, ‘আমার জীবনের অভিজ্ঞতা বলে, আলোচনার মাধ্যমে দূরত্ব কমে আসে। আমরা যদি মুখ ফিরিয়ে থাকি, তাহলে কিন্তু দূরত্ব বাড়তে থাকে। ফলে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাউকে না কাউকে অহংকার পরিত্যাগ করে মিলেমিশে আলোচনা করতে হবে যে, নির্বাচন করতে গেলে আমাদের ভূমিকা কী হবে, আমরা কতটা সংযত থাকব, আমরা কতটা সহযোগিতামূলক আচরণ করব। আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি, নির্বাচনের মাঠে দলীয় কর্মীরা থাকে। ওরা নানাভাবে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যায়। ওদের ভূমিকা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। আমি এটাকে বলতে চাই গ্রাউন্ড লেভেল ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট। এখানে যদি ম্যানেজমেন্টটা দুর্বল হয়... যদিও সবাই সবল বা দুর্বল হবেন না, ইতিহাস বলে সবল দুর্বল হয়, আবার দুর্বলও সবল হয়ে যায়। কাজেই এখানে সবাইকে আস্থা রাখতে হবে। আমরা সবাইকে নির্বাচনমুখী করতে চাই। আমি বলব, আমাদের তরফ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না।’
নিবার্চন কমিশন সরকারি সুবিধাভোগী এবং নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না—বিরোধীদলের এমন মন্তব্যের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আপনি কি মনে করছেন, আমি নিজে গিয়ে দিনের ভোট রাতে মারব? বা আমি দেখেও বলব, যে তাড়াতাড়ি করে ঢোকান। আমি সরকারি কর্মচারী ছিলাম। অতীতে যাঁরা এখানে ছিলেন, তাঁদের কে সরকারি কর্মচারী ছিলেন না? নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশে পলিটিক্যাল লিডারশিপের যে দায়িত্বটা রয়েছে, তাঁরা যদি একে-অপরের সঙ্গে শেয়ার না করেন, তাহলে নির্বাচন কমিশনের এককভাবে যে উদ্দেশ্য অর্জন, সেখানে সীমাবদ্ধতা দেখা দেবে। আমাদের দায়িত্ব রয়েছে, সে পলিটিক্যাল লিডারশিপের কাছে আবদার করা, অনুনয় করা, বিনয় করা এবং যাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের সঙ্গেও আমরা বসব।’
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অ্যাজ আ হোল আমরা সহায়তা করব। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সহায়তা না করে, পলিটিক্যাল লিডারশিপে যদি ন্যূনতম সমঝোতা না থাকে, আমি তো তাদের মুরব্বি হতে পারব না। উনারা আমাদের থেকে অনেক বেশি জ্ঞানী, অভিজ্ঞ। আমরা তাদের কাছে অনুনয়-বিনয় করব—আপনারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করুন, চুক্তিবদ্ধ হোন যে, আপনারা সুন্দরভাবে নির্বাচনটা করবেন। ওখানে সহিংসতা হবে না, কেউ কাউকে বাধা দেবে না।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘আমরা সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করব। আমরা কতটা সৎ ছিলাম, কতটা দায়িত্ব পালন করেছি—সেটি পরে মূল্যায়ন করতে পারবেন। আমরা প্রত্যাশা করি, সবাই নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রকে সুসংহত করবেন। যাঁরা নির্বাচন করবেন, তাঁদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব কমিশনের রয়েছে। কর্মপদ্ধতি কী হবে, সেটি ঠিক করিনি। সাংবিধানিক শপথ অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি।’
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিছু ধস্তাধস্তি হয়। আমাদের যে সামর্থ্য-দক্ষতা, সে অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টার সঙ্গে আমাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব।’
বিএনপিকে আস্থায় আনার বিষয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘দলীয় সরকারের জন্য নির্বাচন করে না। একটি সরকার তো থাকবেই। যেমন ওয়ান ইলেভেনে একটা সরকার ছিল, আবার নির্দলীয় সরকারও ছিল। তাদের অধীনেও কমিশন থাকে। এখন যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা আছে, আমরা চেষ্টা করব ভোটারেরা যাতে ভোট দিতে পারেন। তাঁদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করব। বিএনপি যদি ঘোষণা দিয়েও থাকে, তাদের কী আহ্বান জানাতে পারব না? কোনো কিছুই শেষ নয়। আমরা তো তাদের চা পানের আমন্ত্রণ জানাতেই পারি।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের সামর্থ্য-শক্তি অসীম নয়। এটি সব সময় আপেক্ষিক। টকশোতে পক্ষে-বিপক্ষে কথা হয়, নির্বাচন কমিশন অসীম শক্তিশালী নয়। যার যার অবস্থান থেকে করণীয় না করলে হবে না। কারও ব্যর্থতা থাকলে স্বীকার করতে হবে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোট ভোটের নিয়মে হবে। আগের রাতে হতো কি না, জানি না। আমি অস্ট্রেলিয়ায় বসে দিনে ভোট দেখেছি। তবে, আমরা সেদিকে যেতে চাই না। যদি দেখেন, আমরা সেটি করেছি, আপনারা তখন বলতে পারেন। যদি মানুষের আস্থা বিনষ্ট হয়, তাহলে সেটি ফেরানোর চেষ্টা কি আমরা করব না? আমাদের আপনারা পর্যবেক্ষণে রাখুন, আমরা তো সেখানে বাধা দেব না। রাজনৈতিক দলগুলো চুক্তিবদ্ধ হতে পারে যে, তারা কেন্দ্রে কোনো সহিংসতা করবে না, সংঘাত তৈরি করবে না।
এ সময় নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।