হত্যার পর নির্দেশদাতাকে বলা হয়, ‘স্যার ফিনিশড’

র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) দাবি করেছে, রাজধানীর পল্লবীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সাহিনুদ্দিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়ালের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। পুলিশের এই এলিট ফোর্সের দাবি মতে, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা হয়েছে আউয়ালের কলাবাগানের কার্যালয়ে বসে। আর হত্যাকাণ্ড শেষে একজন খুনি আউয়ালকে ফোন করে বলেন, ‘স্যার ফিনিশড’।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন সংস্থার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, এক বিঘার বেশি জমি কেনার চেষ্টা করছিল সাবেক সংসদ সদস্য আউয়ালের ব্যবসায়িকপ্রতিষ্ঠান ‘হ্যাভিলি প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’। নিহত সাহিনুদ্দিন ও তাঁর স্বজনরা এই জমির মালিক। কম টাকায় জমি কিনতে না পারায় এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘১৬ মে দুপুরে নিজ সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দিনকে চাপাতি, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এরপর বুধবার রাতে চাঁদপুর থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভোরে আউয়ালকে ভৈরব থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া পটুয়াখালীর বাউফল থেকে ১৯ নম্বর আসামি জহিরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।’
তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এম এ আউয়াল দাবি করেন, ‘এই ঘটনায় আমি জড়িত না। তৃতীয় কোনো পক্ষ আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। র্যাব ঘটনার তদন্ত করছে। আমি আশাবাদী, তদন্ত শেষে সব বের হয়ে আসবে।’
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘হত্যার ঘটনার চার-পাঁচদিন আগে আউয়ালের কলাবাগানের অফিসে মোহাম্মদ তাহের ও সুমন হত্যার পরিকল্পনা করে। মাঠ পর্যায়ে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুমনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর সুমন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করে। এ সময় বেশ কয়েকজন কিলিং মিশনে জড়িত ছিল।’
র্যাবের কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সুমন, বাবুসহ কয়েকজন একসঙ্গে মিটিং করে। এরপর ঘটনার দিন তারা মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দিনকে ঘটনাস্থলে ডেকে নেয়। এ সময় সাহিনুদ্দিন তাঁর সন্তান মাশরাফিকে নিয়ে সেখানে যান। তখন ওৎ পেতে থাকা সুমন, মানিক, হাসান, ইকবালসহ ১০-১২ জন সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথম ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয় সুমন। এরপর মানিকসহ বাকিরা কোপাতে থাকে। মনির হাঁটু এবং মানিক উপর্যুপরি সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে জখম করতে থাকে। এ সময় বাবুসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ আসামি বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে পাহারা দিতে থাকে। পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে পুরো ঘটনাটি শেষ হয়। ঘটনা শেষে সুমনসহ বাকিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
“এ সময় সুমন এক নম্বর আসামি আউয়ালকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘স্যার ফিনিশড’।”’
হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে গা ঢাকা দেয় বলে উল্লেখ করেন কমান্ডার মঈন। তিনি আরও বলেন, ১৭ মে মামলার ১৩ নম্বর আসামি দিপুকে র্যাব-৪ গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানায় সোপর্দ করে। এম এ আউয়াল একজন জমি ব্যবসায়ী। তাঁর ছত্রছায়ায় সুমন জমি দখল, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও এলাকায় প্রভাব বিস্তার করত এবং প্রতিমাসে মাসোহারা বাবদ ১০-১২ হাজার টাকা নিত। তা ছাড়া বিভিন্ন কাজেও টাকা নিত। সন্ত্রাসীরা রিকশা টোকেন বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে তরিকত ফেডারেশনের হয়ে সংসদ সদস্য হন এম এ আউয়াল। দলীয় গঠনতন্ত্রের ২৪ এর উপধারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।