হাজি সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
দুর্নীতি মামলায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার ঢাকার বিশেষ জজ শহিদুল ইসলাম এই আদেশ দেন।
এর আগে আজ বিকেল ৩টা ১৯ মিনিটে হাজি সেলিম তাঁর আইনজীবী প্রাণনাথের মাধ্যমে আত্মসমর্পণের আবেদন করেন। পরে ৩ টা ২৩ মিনিটে জামিন সংক্রান্ত শুনানি হয়। শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক শহিদুল ইসলাম।
এদিন হাজি সেলিমের বেলা ৩টা ১৯ মিনিটে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিপুল নেতাকর্মী।
পরে সেলিম আদালতের এজলাসে উপস্থিত হন। এজলাসে যাওয়ার পর আদালতের ভেতরে তাঁর নেতাকর্মীরাও ছিলেন। পরে ৩ টা ২৩ মিনিটে আদালতের বিচারক এজলাসে উঠলে হাজি সেলিম মুখের ইশারা পেয়ে নেতাকর্মীরা এজলাস থেকে বের হয়ে যান। নেতাকর্মীরা বেরিয়ে গেলে শুনানি শুরু হয়।
হাজি সেলিমের পক্ষে তাঁর আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা প্রথমে আপিল শর্তে জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে বলেন, ‘২০১৬ সালে ওপেন হার্ট সার্জারির সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাকশক্তিহীন অবস্থায় রয়েছেন হাজি সেলিম। তিনি দেশ ও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলহাজতে থাকলে চিকিৎসার অভাবে ও বাকশক্তিহীনের কারণে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণে যে কোনো শর্তে তাঁর জামিন আবেদন করছি।’
আইনজীবী আরও বলেন, ‘আসামির জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না। তাই আপিল শর্তে আত্মসমর্পণপূর্বক তাঁর জামিন চাচ্ছি।’
এরপরে দদুকের পক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধীতা করেন। শুনানি শেষে বিচারক হাজি সেলিমের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জামিন নাকচের আদেশের পর হাজি সেলিমের আইনজীবী আরেকটি নতুন আবেদন করেন। সেখানে তাঁকে ডিভিশন ও উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশনের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘হাজি সেলিম একজন সংসদ সদস্য। তিনি এখনো সংসদ সদস্য রয়েছেন। কারাগারে তাঁর যে ডিভিশন পাওয়ার কথা রয়েছে, সেটির বিষয়ে আবেদন করেছে আসামিপক্ষ। ডিভিশন পাওয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না।’
এদিকে, হাজি সেলিম আত্মসমর্পণ করবেন, এমন খবরে সকাল থেকেই নিম্ন আদালতে বাড়তি পুলিশের নিরাপত্তা ছিল।
নথি থেকে জানা গেছে, দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্টের রায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে আত্মসমর্পণ করেন হাজী সেলিম। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিচারিক আদালত হাজি সেলিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০২০ সালের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ভার্চুয়াল বেঞ্চ তাঁর ১০ বছরের সাজা বহাল রাখেন।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি এ রায় প্রকাশ হয়। এতে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ৯ মার্চ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
২০২০ সালের ১১ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতে থাকা যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেছিলেন উচ্চ আদালত। সে আদেশ অনুসারে, নথি আসার পর আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজি মো. সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজি মো. সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তাঁর সাজা বাতিল করেন। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।