হিলিতে আদা রসুন পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছেই
কোরবানির ঈদ আসতে এখনও ৪০ দিনের মতো দেরি। কিন্তু তার আগেই অস্থির হয়ে উঠেছে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজসহ জিরা, আদা, রসুন ও মরিচের বাজার। কোনো ভাবেই কাটছে না দামের অস্থিরতা। দিন যত যাচ্ছে বেড়েই চলেছে এসব পণ্যের দাম।
আজ শুক্রবার (১৯ মে) দুপুরে বন্দরের হিলি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গত দু-তিন দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ খুচরা পর্যায়ে কেজিতে অন্তত ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। আর সাত থেকে আট টাকা বেড়ে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা। যা গেল রোজার ঈদের আগে খুচরা ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজারে এই অবস্থা দেখা গেলেও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস ক্রেতাদের।
এ ছাড়া গত এক মাস আগেও ভারতীয় আমদানি করা জিরা প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হলেও আজ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। আদা একই ভাবে কেজিতে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। রসুনে ৬০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। ৬০ টাকার কাঁচা মরিচ এখন ১২০ টাকা। আর শুকনো মরিচের দাম আগে থেকেই বাড়তির দিকে। তবে আজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪২০ টাকায়।
বাজারে মসল্লা কেনার সময় কথা হয় গোবিন্দগঞ্জ থেকে আসা শায়লা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হিলিতে ভারতীয় পণ্যের দাম কম শুনে কিনতে এসেছি। কিন্তু দেখি আমাদের ওখানে প্রতিটা জিনিস কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা কম আছে। আবার এখানে নাকি নিম্নমানের জিনিস মিশেল করে বিক্রি করা হয়। কিছু মসল্লা কিনে চলে যাচ্ছি।’
হিলি বাজারের পাইকারি বিক্রেতা শেখ বিপ্লব জানান, ‘পেঁয়াজসহ জিরা, আদা, রসুন ও মরিচের দাম রোজার ঈদের পর থেকে কেজিতে অন্তত ডাবল বেড়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা বেশি দামে কিনে এনে ব্যবসা করছি। কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা লাভ রেখে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। ওরা আবার লাভ করে বিক্রি করছে। এভাবে হাত বদলে দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ক্রেতারা বেশি দাম শুনে রাগান্বিত হচ্ছে।’
বাজারের খুচরা বিক্রেতা মঈনুল জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি শুরু হলে দাম অনেক কমে আসবে। আমদানি বন্ধের সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ার এই সুযোগ নিচ্ছে। আজ হিলি বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দু-তিন দিন আগেও ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এই অবস্থা চলছে। পেঁয়াজ ছাড়াও আদা, রসুন, জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, মরিচসহ জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। এ নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রায় সময়ই বচসা হচ্ছে।’
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক হাজি শহীদুল ইসলাম বলেন, “দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভারত থেকে দেশে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে পেঁয়াজের বাজারে দামের এই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। যত দিন যাবে ততই দাম বাড়বে। দেশি পেঁয়াজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটানো সম্ভব না। তাই ক্রেতাদের দামে স্বস্তি দিতে হলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই অবস্থায় সরকারের মন্ত্রী আমলারা পেঁয়াজ আমদানিতে অনুমতি (আইপি) দেওয়ার কথা জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো অনুমতি দেয়নি। আমরা আমদানিকারকরা অপেক্ষায় আছি। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।”
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা মতো কোনো পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার প্রতিনিয়ত রপ্তানি মূল্যও বেড়ে যাচ্ছে। এলসি করতেও জটিলতা। বর্তমানে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে জিরা, আদা খুব কম পরিমাণে আমদানি হচ্ছে। সরকার দুই মাস ধরে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রেখেছে। তাই কোরবানির ঈদের আগে থেকে বাজারে প্রতিটি পণ্যের সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সরকারকে আমদানিকারকদের সহযোগিতা করা দরকার। না হলে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”
এদিকে আজ শুক্রবার সকালে রংপুরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দু-এক দিনের মধ্যে দাম না কমলে পেঁয়াজ আমদানি করবে সরকার। নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
কয়েক দিন আগে সরকারের কর্মকর্তারা বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে জানান, তাঁরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। দাম যদি এভাবেই বাড়তে থাকে তাহলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। তার পরও প্রতিদিন হু হু করে দাম বাড়লেও এখন পর্যন্ত আমদানির অনুমতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম জানান, উপজেলার প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। যাতে কোনো ব্যবসায়ী বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে না পারে। এ ছাড়া মাসে অন্তত দুবার বাজার মনিটরিং করা হয়ে থাকে। দু-এক দিনের মধ্যে বাজারে অভিযান চালানো হবে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, সরকার দেশের কৃষকদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে অনুমতি (আইপি) দিয়েছিল। এরপর ১৬ মার্চ থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। তবে আমদানির নতুন কোনো খবর নেই বলেও জানান তিনি।