২৫ হাজার করে টাকা পেয়ে খুশি বঙ্গবাজারের কর্মচারীরা
বঙ্গবাজারে ব্যাপারী কালেকশন ও নাফিয়া কালেকশন নামের দুটি শাড়ির দোকান ছিল নাসিম ব্যাপারীর। দুটি দোকানের সব শাড়িই পুড়ে গেছে অগ্নিকাণ্ডে। দুটি দোকানে কর্মচারী ছিল মোট আটজন। সবাই আজ খুশি। কারণ, তারা সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ৯ কোটি টাকা থেকে ২৫ হাজার করে টাকা ঈদ উপহার পেয়েছেন। বিকাশের মাধ্যমে তারা এ টাকা পেয়েছেন।
আট কর্মচারীর একজন সেফাতুল ইসলাম নিজের বিকাশে ২৫ হাজার ৪৬২ টাকা পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে সেফাতুল ইসলাম চৌকিতে কয়েকটি শাড়ি রেখেছেন বিক্রির জন্য। বিক্রি নেই। তবুও তার মনে আনন্দ। আনন্দের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ২৫ হাজার ৪৬২ টাকা পেয়েছি। আমরা আটজন সবাই পেয়েছি। আজ একটু ভালো লাগছে। পরিবারের জন্য কিছু কিনতে পারব।’ যদিও এ টাকাগুলো তুলতে তাঁর খরচ হবে ৪৬২ টাকা।
নাসিম ব্যাপারীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘কর্মচারীরা সবাই টাকা পেয়েছেন। আমি এখনও কিছু পাইনি। কখন পাব, তাও জানি না। আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’
সেফাতুল ইসলামের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তখন রিফাত হোসেন নামের আরেক দোকানের কর্মচারী আসেন সেখানে। রিফাত বলেন, ‘আমি এখনও টাকা পাইনি। আমার বিকাশ নম্বর ছিল না। একটা মোবাইলফোন নম্বর আর নাম দিয়ে আসছি। ক্যাশ পাব বলে শুনেছি। তবে, কখন পাব তা জানি না।’
নিউ টপস কালেকশনের কর্মচারী শিশির শেখ ২৫ হাজার ৪৬২ টাকা পেয়েছেন বিকাশে। তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে আমার বিকাশে টাকা এসেছে। আমার খুব ভালো লাগছে আজ।’ তবে, শিশির শেখের পাশে বসে থাকা অন্য দোকানের আরও চারজন কর্মচারীর দাবি; তারা কেউ টাকা পাননি। যে সময় তালিকা করা হয়েছিল, সে সময় তারা উপস্থিত ছিলেন না বলে তাদের দাবি। তারা এখন হাহুতাশ করছেন। তারা চাচ্ছেন, যেন আবার তালিকা করা হয় কর্মচারীদের।
নিউ টপস কালেকশনের মালিক সোহাগ ব্যাপারী বলেন, ‘আমার চারজন কর্মচারী ছিল। এদের মধ্যে তিনজন কাগজপত্র জমা দেয়নি। শিশির কাগজপত্র দিয়ে ও টাকা পেয়েছে। আমরা (মালিক) কখন পাব, তার কিছুই জানি না। আমাদের জানানোও হয়নি।’
রূপা গার্মেন্টসের তিনটি দোকান ছিল বঙ্গবাজারে। তিন দোকানে চারজন কর্মচারী ছিল। এদের একজন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি টাকা পাইনি। তবে, আমার দুজন সহকর্মী ২৫ হাজার করে টাকা পেয়েছেন।
সাইফুল গার্মেন্টস নামের একটি দোকানের ২৫ জন সেলসম্যান ছিল। ২৫ জনের মধ্যে মারুফ হোসেন নামের একজন সেলসম্যান ২৫ হাজার ৪৬২ টাকা পেয়েছে বিকাশে। এই দোকানের মালিকের ছোটভাই সাঈদ ইসলাম বলেন, ‘মোট ২৫ জন কর্মচারী ছিল, এর মধ্যে মারুফ পেয়েছে। আর বাকি ২৪ জন কাগজপত্র জমা দেয়নি। তাই তারা পাইনি। আর তালিকা করবে কি না জানি না। করলে সবার নাম দিব। ওদের একটু উপকার হতো।’
সৌরভ গার্মেন্টসের মালিক রিয়াদ হোসেন। তিনি চৌকির ওপর বসে কাপড় বিক্রি করতে করতে বলেন, ‘আমার তিনজন কর্মচারী ছিল। ওদের দুজন ২৫ হাজার করে টাকা পেয়েছে। খুব আনন্দ পেয়েছে ওরা। বাকি একজন গ্রামে গেছে বলে নাম দেয়নি। তাই সে পায়নি। আমাদের কত টাকা দেবে আল্লাহ জানে।’
এছাড়া অন্তত আরও ১০ জন কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে ৭ জন টাকা পেয়েছেন। বাকি তিনজন কাগজপত্র জমা দেননি। এ তিনজন চাচ্ছেন, যেন আবার নাম নেওয়া হয়। তারপর সরকারের দেওয়া এ উপহার তারা পেতে চান। এদের মধ্যে নাসিমুল হোসেন নামের একজন বলেন, ‘অন্তত ২৫ হাজার সেলসম্যান ছিল বঙ্গবাজারে। এখনও অনেকে টাকা পায়নি। তবে, অর্ধেকের বেশি লোক পেয়েছে এ টাকা।’
বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক, ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের জন্য ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
গত ৪ এপ্রিল সকালে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগে। এতে বঙ্গবাজার মার্কেটসহ আশেপাশের কয়েকটি মার্কেটের দোকান পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীনকে আহ্বায়ক ও প্রধান সমাজকল্যাণ এবং বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীনকে সদস্য সচিব করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ কমিটি তিন হাজার ৮৪৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর নামের তালিকাসহ বিস্তারিত তথ্য পেশ করে।