নাসিরনগরের ঘটনায় আ. লীগের বহিষ্কৃত নেতা গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক বহিষ্কৃত সভাপতিকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিজ এলাকা উপজেলার চাপড়তলা ইউনিয়ন থেকে সুরুজ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। পরে বহিষ্কৃত হন।
জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘নাসিরনগরে হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে সুরুজ আলীকে শনাক্ত করা হয়। তিনি এখন ডিবি পুলিশের হেফাজতে আছেন।’
এ নিয়ে নাসিরনগরের হামলার ঘটনায় আটটি মামলায় গ্রেপ্তার হলো মোট ১০৭ জন।
এর আগে গত ৫ জানুয়ারি ঢাকার ভাটারা এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত ২৮ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের বাসিন্দা রসরাজ দাস নামের এক যুবকের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবাঘরের ছবি সম্পাদনা করে পোস্ট করেন। এ নিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ ওঠার পর স্থানীয় লোকজন তাঁকে পুলিশে দেয়।
এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পরের দিন ২৯ অক্টোবর দিনভর নাসিরনগর সদর উত্তাল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পরের দিন ৩০ অক্টোবর উপজেলা সদরের কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশ চলাকালে সদরের একাধিক মন্দির ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
এ ঘটনার পর ৪ নভেম্বর উপজেলায় হিন্দুদের পাঁচটি ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ৫ নভেম্বর নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেবের গোয়ালঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর ১৬ নভেম্বর তাঁর বাড়ির আঙিনায় রাখা পাটখড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
নাসিরনগরে মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মোয়াজ্জেম হোসেন এবং নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়। সহিংসতার ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় স্থানীয় তিন নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। তাঁরা হলেন নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ, চাপড়তলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরুজ আলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক আবুল হাশেম। এ ছাড়া গত ২৭ ডিসেম্বর নাসিরনগরের হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল আহাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এদিকে গত ২৮ নভেম্বর জেলা পুলিশের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে রসরাজের ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে ধর্ম অবমাননাকর সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়নি বলে উল্লেখ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরেনসিক বিভাগ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইনও এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।