যেসব যুক্তিতে খারিজ তিন চ্যানেল বন্ধের রিট
দুটি যুক্তি দেখিয়ে ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার প্লাস, স্টার জলসা ও জি বাংলা বন্ধ চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ রোববার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি খারিজ করেন।
প্রথম যুক্তিতে আদালত বলেন, টিভি চ্যানেল নেটওয়ার্ক আইন ২০০৬ অনুযায়ী, যেকোনো চ্যানেল প্রচারে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ওই আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী, কেউ অশ্লীল দৃশ্য প্রদর্শন ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যবিরোধী কোনো কিছু প্রদর্শন করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রতিকার চাইতে পারে। সরকার আবেদন গ্রহণ করে সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে পারে।
এ ছাড়া টিভি চ্যানেলে প্রচারিত বিষয় নিয়ে সরকারের ১১ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে, যাঁরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু এ মামলার রিটকারী এসব চ্যানেল বন্ধে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেননি। তাই রিটকারীর আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয় যুক্তিতে আদালত বলেন, আবেদনকারী একই যুক্তি দিয়ে হাইকোর্টে ২০১৪ সালে রিট করেছিলেন। ওই রিট উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু পুনরায় রিট করার সময় আবেদনকারী নতুন কোনো যুক্তি দেখাতে পারেননি। তাই রিট আবেদনটি গ্রহণযোগ্য নয় মর্মে খারিজ করা হলো।
এ রায়ের ফলে বাংলাদেশে এ তিনটি চ্যানেল প্রদর্শনে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু।
তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন এখলাসউদ্দিন ভূঁইয়া। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভারতীয় এসব টিভি চ্যানেলে প্রচারিত বিভিন্ন সিরিয়ালের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যে আঘাত হানা হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীসহ প্রত্যেক পরিবারেই কলহ-বিবাদ চলছে। এরই মধ্যে এসব সিরিয়াল দেখে প্রভাবিত হয়ে ২০ জনের মতো নাগরিক আত্মহত্যা করেছে। অনেক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। বিষয়টি জনস্বার্থে চিন্তা করে রিট করা হয়। আদালত শুনানি শেষে রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন। এ রায়ে তিনি সংক্ষুব্ধ। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আশা করা যায়, আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে।
২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে ভারতীয় এ তিন টিভি চ্যানেল বন্ধে নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
ওই সময় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
রুলে তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়।
এর আগে ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা শাহীন আরা লাইলি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন। এতে ভারতীয় সব চ্যানেল বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন করা হয়।