লক্ষ্য ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘরে ঘরে আলো জ্বালব- সেটাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশের একটি ঘরও আর অন্ধকারে থাকবে না। এ সময় তিনি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য সবাইকে পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন ট্রান্সমিশন ও বিতরণ লাইনের পাশাপাশি আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। উদ্বোধন করা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে মোট এক হাজার ৩৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে সদ্য নির্মিত আটটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, একটি সাবস্টেশন এবং একটি সঞ্চালন লাইনও রয়েছে। প্রকল্পগুলো চালু হলে বিভিন্ন জেলার ১০টি উপজেলা এবং বান্দরবনের একটি উপজেলায় বিদ্যুৎ শতভাগ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমেদ কায়া কাউস পাওয়ার পয়েন্ট পেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও ক্লিপিংসও প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
১০টি উপজেলা হচ্ছে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও সাভার উপজেলা, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলা, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা, ফেনীর দাগনভূইয়া উপজেলা, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচড় উপজেলা, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা এবং নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা, পার্বত্য এলাকায় বান্দরবনের থানচি উপজেলা।
সদ্য নির্মিত আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো- শাহজিবাজার ৩৩০ মেগওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, খুলনার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, মানিকগঞ্জের ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, নবাবগঞ্জের ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, জামালপুরের ৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, বরিশালের ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মদনগঞ্জ ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মতবিনিময় করেন গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া, মেহেরপুরের মুজিবনগর, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, বান্দরবনের থানচি উপজেলাবাসী, গাজীপুরের কালিয়াকৌরবাসীর সঙ্গে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আমরা চেষ্টা করেছি, যার সুফলটা এখন দেশের মানুষ পাচ্ছেন। অতীতে বিদ্যুৎ নিয়ে হাহাকার অবস্থা ছিল। আমরা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বহুমুখীকরণের এবং বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সততা ও দক্ষতার সাহায্যে উৎপাদন বৃদ্ধি করে বর্তমানে আমরা ১৫ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব করেছি। শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে দেশের মান যে উন্নত করা যায় তা আমরা প্রমাণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের উদ্দেশে বলেন, দীর্ঘদিন এখানে একটি অশান্ত পরিবেশ ছিল। আমি প্রথমবার সরকারে আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি করি এবং এরপর সেখানে সত্যিই শান্তি ফিরে আসে এবং সার্বিক উন্নয়নের ব্যাপক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যেটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেই রাস্তাঘাট, ব্রিজ- আমরা করে দিচ্ছি। পাশাপাশি এখানে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সেখানে যেন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারে সেই নেটওয়ার্ক আমরা করে দিয়েছি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রূপালি ব্যাংকের ‘শিওর ক্যাশের’ মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজয় সরণি এলাকার প্রস্তাবিত বর্ধিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর একটি উপস্থাপনা প্রত্যক্ষ করেন। সেনাবাহিনীর প্রধান প্রকৌশলী মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান এটি উপস্থাপন করেন।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন এতে আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী উপস্থাপনাটি প্রত্যক্ষ করার পর শহরের ব্যস্ততম এলাকা বিজয় সরণির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য কিছু পরামর্শ দেন।