জঙ্গি পথ ছাড়লে পুনর্বাসন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিপথগামী জঙ্গি সদস্যরা জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফিরে এলে তাদের আইনি সহায়তাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ বুধবার সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবিলার জন্য একটি যুগোপযোগী স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোডাক্ট (এসওপি) তৈরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় জঙ্গি দমনে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকার নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর অংশ হিসেবে জঙ্গি সংগঠনগুলোর অনলাইনভিত্তিক প্রচারণার দিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হবে। এ জাতীয় প্রচারণার মাধ্যমে যাতে জনগণের মধ্যে জঙ্গিবাদী মতাদর্শের র্যাডিক্যালাইজেশন না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগের সরকারের সময় মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকার ফলে কর্মক্ষেত্রে তাদের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা ছিল। মাদ্রাসাশিক্ষা শেষে বেরিয়ে আসা ছাত্ররা যেন কর্মক্ষেত্রে সম্মানের সঙ্গে নিজেদের মেধাকে কাজে লাগাতে পারে সে দিকটিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।
‘জঙ্গিবাদবিরোধি ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, মসজিদের ইমাম, আলেম সমাজ, শিক্ষক-ছাত্র সমাজ, অভিভাবক, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’
শেখ হাসিনা জঙ্গি দমনে সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কিছু সফল অভিযানে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি নেতাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গ্রেপ্তার ও নিহত হয় এবং বিপুল অস্ত্র ও গোলা-বারুদ উদ্ধার করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সব অভিযানের ফলে বর্তমানে জঙ্গি তৎপরতা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এবং জঙ্গি দমনে এ সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ২০১৬ সালে মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটরে অনুষ্ঠিত একাদশ আসেম সম্মেলন এবং জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দও বাংলাদেশের জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদবিরোধি ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গি সদস্য এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে এবং তাদেরকে মোটিভেশন ও সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সন্দেহভাজন নিখোঁজ ব্যক্তি এবং পলাতক জঙ্গিদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। অনেকে তাদের নিজ গৃহে ফিরে এসেছে। এটি বর্তমান সরকারের জঙ্গিবাদবিরোধি অন্যতম সফলতা।