কাগজের মান ভালো, বিক্রিও হয় তবু ধুঁকছে কর্ণফুলী
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/03/02/photo-1488472597.jpg)
বাজারের অন্যান্য বেসরকারি কারখানার কাগজের চেয়ে মানে ভালো কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) উৎপাদিত কাগজের। গত পাঁচ বছরে উৎপাদন কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। কিন্তু উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হয়ে গেছে সবটুকুই। তবু দিনে দিনে জৌলুস হারিয়েছে সরকারি এ কাগজকল। এখন একেবারে ধুঁকছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিনতে না পারায় মিলটির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাপকভাবে নেমে গেছে। মাসের পর মাস বেতনভাতা বকেয়া পড়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাঁরা বলছেন, সরকারের ন্যূনতম সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারে মিলটি।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় প্রায় সাড়ে ৪০০ একর জমিতে কর্ণফুলী পেপার মিলের প্রতিষ্ঠা হয়েছিলে ১৯৫৩ সালে। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের ১০ অক্টোবর। বর্তমানে বাঁশবাগানসহ মিলটির মোট জমির পরিমাণ সোয়া লাখ একরের বেশি। বছরে ৩০ হাজার মেট্রিক টন কাগজ ও ২৪ হাজার মেট্রিক টন মণ্ড উৎপাদনক্ষমতার মিলটি এখন চরম আর্থিক সংকটে ধুঁকছে বলে জানান মিল সংশ্লিষ্টরা।
কারখানার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল কাদির ভূঁইয়া বলেন, ‘মিলটির সার্বিক বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তাঁরাও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। মিলটি একেবারে বন্ধ নয়। মাঝে মাঝে যতটুকু কাঁচামাল পাওয়া যায়, তাই দিয়ে সীমিত আকারে উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছে।’
চলমান সংকট নিরসনে উদ্যোগ আছে বলে মিল কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও বাস্তবে তেমন কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। ফলে বিগত পাঁচ বছরে মিলের উৎপাদন পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে।
কাগজ উৎপাদনে পাঁচ বছরের লক্ষ্যমাত্রা, প্রকৃত উৎপাদন ও বিক্রয় বিবরণী
অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা (মে.টন) প্রকৃত উৎপাদন প্রকৃত বিক্রয়
২০১১-১২ ২২,০০০ ২০,৭৬৫ ১৮,০৪৭
২০১২-১৩ ২২,০০০ ১৩,৭৭৫ ১৫,২৮৫
২০১৩-১৪ ২২,০০০ ১৩,০৯৯ ১৪,০৭৫
২০১৪-১৫ ১৫,০০০ ১২,৬৭১ ১২,২৯৬
২০১৫-১৬ ১৫,০০০ ৫,৭১৮ ৬,১১৬
সূত্র : কেপিএম
হিসাব নিয়ে দেখা গেছে, কাগজ উৎপাদন যখন যা-ই হয়েছে, তার প্রায় সবটাই বিক্রি হয়ে গেছে। কর্ণফুলী পেপার মিলে উৎপাদিত কাগজের এই চাহিদার মূল কারণ পণ্যের গুণগত মান বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
কাগজ ব্যবসায়ী আবদুল আলিম আবদুল্লাহ বলেন, ‘এখন প্রাইভেট সেক্টরে যারা কাগজ তৈরি করছে, তাদের চেয়ে কর্ণফুলীর কাগজের মান অনেক ভালো ছিল।’
গত বছর ১৫ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল এক-তৃতীয়াংশ। চলতি বছর মিলটির উৎপাদন পরিস্থিতি আরো নাজুক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কখনো-সখনো কিছু পরিমাণ কাগজ উৎপাদিত হলেও বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে মিলটি। ফলে বিরাজমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের কার্যকর উদ্যোগ চাইছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।
কেপিএম শ্রমিক-কর্মচারী পরিষদের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ১৫-১৬ হাজার টাকা বেতন পাই। কিন্তু গত তিন মাস ধরে সেটাও পাচ্ছি না। এখানে শ্রমিকদের খুবই করুণ অবস্থা যাচ্ছে।’
কেপিএম শ্রমিক-কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান মুক্তারও আশা করেন, সরকার এই মিলটি সচল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
বর্তমানে কর্ণফুলী পেপার মিলের চলতি মূলধন নেই। জরুরি ভিত্তিতে মাত্র ৭৫ কোটি টাকা পেলে কাঁচামাল, কেমিক্যালসহ অন্যান্য উপযোগ সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটিকে সচল রাখা যায় বলে মত দিয়েছেন মিল সংশ্লিষ্টরা।