নাইকো মামলার বৈধতা প্রশ্নে রায় কাল
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলা চলবে কি না, সে বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রায় ঘোষণা করা হবে।
খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে করা রিটের ওপর রুলের শুনানি শেষে গত ২৮ মে রায় যে কোনো দিন দেওয়া হবে জানিয়ে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা নাইকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটের শুনানি গত ২৮ মে শেষ হয়। আদালত গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর রায় দেওয়া হবে বলে অপেক্ষমাণ রাখেন। আজ বুধবার আদালতের কার্যতালিকায় দেখা যায় আগামীকাল এ বিষয়ে রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
ওই রুলের ওপর বেশ কয়েক দিন ধরে উপরিউক্ত বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
ব্যারিস্টার রাগীব রউফ শুনানিতে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা আদালতে বলেছি, একই ঘটনা থেকে উদ্ভূত একই দিনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও নাইকো দুর্নীতি মামলা হয়েছিল। হাইকোর্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এ কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও এ মামলা চলতে পারে না। এ ছাড়া এ মামলায় রাষ্ট্রীয় ক্ষতিসাধন করে খালেদা জিয়া ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন এমন কোনো অভিযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তখন তিনি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে অনুমোদন দিয়েছিলেন যা দুর্নীতির সংজ্ঞায় পড়ে না। সংবিধানের ৫৫ ও ১৪৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক আদেশ বা কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ নেই। এসব কারণে মামলাটি অবৈধ ও বেআইনি।’
অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আমি আদালতে শুনানিতে বলেছি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলা আর এ মামলা এক নয়। এ মামলায় অপরাধের যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। অপরাধের তথ্য-উপাত্ত, কার কতটুকু দায়িত্ব সেটা বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত হবে। এটা হাইকোর্টে রিট আবেদনের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না এবং এ ধরনের রিট আবেদন গ্রহণযোগ্যও হবে না।’
মামলার বিবরণে জানা যায়, কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ১০ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ক্ষতিসাধনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত এবং রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এদিকে, গ্যাটকো মামলার বিবরণে জানা যায়, খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় চট্টগ্রাম বন্দর ও কমলাপুরের কনটেইনার টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য মেসার্স গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
মামলাটির অনুমোদনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে খালেদা জিয়া রিট আবেদন দায়ের করলে ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন এবং রুল জারি করেন। এ ছাড়া মামলা জরুরি ক্ষমতা বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৭ সালে আলাদা একটি রিট আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট এ বিষয়েও রুল জারি করেন। এখন এই দুটি রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানিকালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হবে।
এ ছাড়া ওয়ান-ইলেভেনে জরুরি অবস্থা চলাকালে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। শাহবাগ থানায় করা এ মামলায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি হয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছিল খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। পরে এ মামলা দায়ের ও অনুমোদনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ হাইকোর্টে বাতিল আবেদন করা হয়। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলা কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এখন একই বেঞ্চে এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়েছে।