সেনাকুঞ্জে ড. ইউনূস-খালেদা জিয়ার কথোকপথন, বললেন ‘আমরা আনন্দিত ও গর্বিত’
সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথোপকথন হয়েছে।
সেনাকুঞ্জে পৌঁছার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের চেয়ারে বসানো হয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। এ সময় দুজনকে হাস্যোজ্জ্বল ভঙিতে দেখা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে সেনাকুঞ্জে পৌঁছান বেগম খালেদা জিয়া। সেনাকুঞ্জে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান সেনাপ্রধানসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসময় তাঁর সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি।
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে ড. ইউনূস বললেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যোগদানের সুযোগ পাওয়ায় আনন্দ ও গর্ববোধ করছি।
ড. ইউনূস বলেন, খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনীতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। আজ সুযোগ পেয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত যে, আপনাকে (খালেদা জিয়াকে) এই সুযোগ দিতে পেরেছি।
ড. ইউনূস বলেন, শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই অনুষ্ঠানে আপনাকে বিশেষভাবে স্বাগত জানাচ্ছি।
এসময় খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
এর আগে আজ বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে বাসভবন ফিরোজা থেকে নিজের সাদা রঙের প্রাডো গাড়ি করে সেনাকুঞ্জে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। হুইল চেয়ারে করে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে এসময় পাশের চেয়ারে এসে বসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ করেন। এসময় তাঁদের দুজনকেই হাস্যোজ্জ্বল দেখায়। পরে অনুষ্ঠান শেষে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির চেয়ারপাসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন তার ছোট ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। এছাড়া সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ, ড. আব্দুল মঈন খান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী। খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলে এলাহী আকবর, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এ কে এম শাসমুল ইসলাম প্রমুখ।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সিলেট সফর করেন খালেদা জিয়া। আর ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যান। তারপর ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের মধ্যে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেলেও কোনো জনসম্মুখে অনুষ্ঠানে যাননি তিনি। ৬ বছর পর কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। ২০১০ সালের নভেম্বরে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে তার সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। এর পর থেকে তিনি আর সেনানিবাসে যাননি।