বাংলাদেশ বেতারে উর্দু আরবি হিন্দি খবর
ঢাকা ও এর আশপাশে গাড়িতে পথ চলতে বা কানে হেডফোন লাগিয়ে এফএম রেডিওতে যদি আরবি, উর্দু, হিন্দি ভাষায় উপস্থাপনা, গান ও খবর শুনতে পান, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আপনি বাংলাদেশ বেতারই শুনছেন। বহির্বিশ্ব কার্যক্রম থেকে প্রচারিত হচ্ছে এসব অনুষ্ঠান।
প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয়ে এ কার্যক্রম চলে রাত ২টা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে প্রচারিত হয় খবর, আলোচনা অনুষ্ঠান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, গান। পাশাপাশি থাকে বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নবিষয়ক অনুষ্ঠানসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ বেতারের একটি স্বতন্ত্র ইউনিট হিসেবে ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি ইংরেজি ও হিন্দি সার্ভিসের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে বহির্বিশ্ব কার্যক্রম। এর পথপরিক্রমায় এই সার্ভিস থেকে বাংলা, পশতু, পাঞ্জাবি, নেপালি, উর্দু ভাষায় খবর ও অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। তবে এই মুহূর্তে চালু রয়েছে মোট ছয়টি ভাষার কার্যক্রম। এগুলো হলো– বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, আরবি ও নেপালি ভাষা।
বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের পরিচালক কামাল আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের একটা বন্ডিং (বন্ধন) তৈরি হওয়া, আমাদের সম্পর্কে তাদের জানানো, আমাদের আর্ট কালচারসহ (সংস্কৃতি) সবকিছু তাদের সামনে তুলে ধরা। আমাদের যেসব পজিটিভ বিষয় আছে, যেসব ট্র্যাডিশনাল (ঐতিহ্যবাহী) বিষয় আছে, সেগুলো বিশ্বের মানুষের সামনে তুলে ধরতেই পলিসি অনুযায়ী এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।’
কামাল আহমেদ আরো বলেন, ‘আমাদের পুরো বিষয়টাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা আর এটার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ববাসীর সঙ্গে একটা বন্ডিং তৈরি করাই এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য। গভর্নমেন্টের সাকসেস (সরকারের সাফল্য), ফরেন পলিসি (বৈদেশিক নীতি) সবকিছুই এখানে তুলে ধরা হয়।’
কাদের জন্য এই কার্যক্রম তা জানতে চাইলে বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের পরিচালক বলেন, ‘এসব দেশের কিছু সিটিজেন (নাগরিক) আমাদের দেশে থাকে। আবার ওই সব দেশেও আমাদের অনেক সিটিজেন (নাগরিক) আছে। তারা শুনবেন এই প্রোগ্রাম।’
বাংলাদেশ বেতার থেকে উর্দু ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার সম্পর্কে জানতে চাইলে বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে উর্দু ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। পরে বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের স্বতন্ত্র ইউনিট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে উর্দু সার্ভিসটি। মূলত পাকিস্তানিদের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে বা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানাতেই এই সার্ভিস কাজ করে। ভারতের কিছু অংশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এই সার্ভিসের অনুষ্ঠান শুনতে পায়।
১৯৭৩ সালের ২০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগ্রহে বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয় আরবি সার্ভিস। আরব বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে এই সার্ভিস বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বেতার।
শর্ট ওয়েভের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রম চলছে বলে জানান কামাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বেতারের যে শর্টওয়েভ ট্রান্সমিটার তা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক। এ রকম অটো রোটেট্যাবল আধুনিক শর্ট ওয়েভ সিস্টেম আর কোথাও নেই। কম্পিউটারের মাধ্যমে কমান্ড করেই এই ওয়েভকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’
বর্তমানে বহির্বিশ্ব কার্যক্রম ইউরোপের শ্রোতাদের জন্য শর্টওয়েভ ১৩৫৮০ কিলোহার্জে, মধ্যপ্রাচ্যের শ্রোতাদের জন্য শর্টওয়েভ ৭২৫০ কিলোহার্জে প্রচারিত হয়।
এ ছাড়া ভারতের শ্রোতাদের জন্য প্রতিদিন রাত সোয়া ৯টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত শর্টওয়েভ ১৫৫০৫ কিলোহার্জে টার্গেট এলাকা ভারতের জন্য আধাঘণ্টার অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেওয়া এবং নির্মল বিনোদনের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে পরিচিত করতে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে এই বহির্বিশ্ব কার্যক্রম।
এসব অনুষ্ঠানে যাঁরা অংশ নেন বা খবর পড়েন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতারের খবর এসব ভাষায় ভাষান্তরে দক্ষ এবং সংবাদ পাঠে যোগ্য ব্যক্তিরাই কাজ করেন এসব সার্ভিসে।
অনুষ্ঠানসূচি
প্রতিদিন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইংরেজি সার্ভিসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কার্যক্রম। এরপর সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নেপালি, সাড়ে ৮টা থেকে উর্দু, সোয়া ৯টা থেকে হিন্দি, রাত ১০টা থেকে আরবি, সাড়ে ১০টা থেকে বাংলা, পৌনে ১২টা থেকে ইংরেজি সার্ভিসের দ্বিতীয় অধিবেশন এবং সবশেষে রাত সোয়া ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বাংলা সার্ভিসের দ্বিতীয় অধিবেশনের অনুষ্ঠান হয়।
এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে বাংলা ও ইংরেজি সার্ভিসের সময়সীমা অন্য ভাষার তুলনায় বেশি। এই দুটি ভাষায় খবর ছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, সাক্ষাৎকার, গান, নাটিকা ইত্যাদি প্রচারিত হয়। তবে উর্দু, আরবি, হিন্দি ও নেপালি ভাষায় হয় মূলত খবর আর গান।
এক সার্ভিস শেষ হওয়ার পর অন্য সার্ভিস শুরু হওয়া পর্যন্ত প্রচারিত হয় বিভিন্ন ভাষার জনপ্রিয় গান।