রামপাল নিয়ে জ্যোতিষ নির্ভর অভিযোগ করা হচ্ছে : হাছান মাহমুদ
রামপাল নিয়ে অভিযোগ অনুমান নির্ভর, আবেগ এবং জ্যোতিষ বিদ্যা নির্ভর বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে দলটি।
হাছান মাহমুদ বলেন, রামপাল নিয়ে তাদের অভিযোগ অনুমান নির্ভর, আবেগ এবং জ্যোতিষ বিদ্যা নির্ভর। বিজ্ঞান নির্ভর নয়। যারা অভিযোগ করছেন, তাঁদের শীর্ষ ব্যক্তিদের অভিযোগ অনুমান কিংবা আবেগ নির্ভর নয়, ষড়যন্ত্র নির্ভর। যারা আবেগের কারণে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের আমরা সম্মান জানাই। কিন্তু যাদের অভিযোগ জ্যোতিষ বিজ্ঞান নির্ভর, তাদের বিজ্ঞান নির্ভর কোনো যুক্তি উপস্থাপনের আহ্বান জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল অভিযোগ করেন, রামপাল নিয়ে সরকার দেশে-বিদেশে অসত্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছে না। এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করছে না। সুলতানা কামালের প্রতি সম্মান রেখে আমি বলছি, তিনিসহ যাঁরা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁরাই জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। এক্সিম ব্যাংক ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে অর্থায়ন করছে। তাই এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকার পরিবেশ রক্ষায় প্রথমে সুপার ক্রিটিকাল পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা ছিল। কিন্তু সরকার অধিকতর নিরাপত্তার জন্য আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এ জন্য যন্ত্রপাতি আমদানি করছে সরকার।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিঃসরিত ছাই কিনতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সিমেন্ট কারখানা এখনই যোগাযোগ করছে বলেও জানান হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বড় পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সেখানখার ক্ষেতখামারের উৎপাদন না কমে, কোনো কোনো জায়গায় তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সনাতন পদ্ধতির বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে যেখানে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয়নি। সেখানে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পদ্ধতির কারণে ওই সব এলাকার কোনো ক্ষতি হবে না।
সুন্দরবন রক্ষা কমিটির সংবাদ সম্মেলনে ভাড়াটে বিশেষজ্ঞ ব্যবহার করা হয়েছে দাবি করে সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, গতকালকের সংবাদ সম্মেলনে যেসব আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত উপস্থাপন করেছেন, ‘তাদের কয়েকজনকে আমি চিনি। পৃথিবীতে টাকা দিলে অনেক ভাড়াটে বিশেষজ্ঞ পাওয়া যায়।’
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সরানোর সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সরকার প্রধান বলেছেন সকল প্রকার সুরক্ষা নিয়েই আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতেছি। তাই এ প্রকল্প অন্যত্র সরানোর কোনো সম্ভাবনাই নেই।’
রামপাল ইস্যুতে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, পদ্মা সেতুই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল, তখন একজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন, সচিব গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের বক্তব্যই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। রামপাল ইস্যুতে এখন যারা জাতিকে বিভ্রান্ত করে ষড়যন্ত্র করছেন তাঁদের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে। এবারও সরকারের বক্তব্যই সত্য বলে প্রমাণিত হবে।
হাছান মাহমুদ বলেন, কাল যিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি, তাঁর সংগঠনসহ টিআইবি এবং জাতীয় তেল-গ্যাস-বন্দর রক্ষা কমিটির অনেকেই পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু মামলায় বিশ্বব্যাংক হেরে যায়। এ মামলার রায়ের পরে আমরা তাদের জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। পদ্মা সেতুতে ষড়যন্ত্রে সফল না হয়ে তারা এখন রামপালকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করার পথ বেছে নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফরিদুন্নাহার লাইলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, আবদুস সবুর, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম রাব্বানী চিনু, রিয়াজুল কবির কাওছার, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।