বাড়ি তুলে পুকুরে ফেলে দিল দুর্বৃত্তরা!
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় পাটগাতি বাজার এলাকায় তপন সাহা পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে পুকুরে ফেলে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এখন শুধু ভিটে পড়ে রয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইয়াসীন খলিফা ও ফরিদ খলিফার নেতৃত্বের ৪০ লোক জন তপন সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। ঘরের সব আসবাবপত্র ভেঙে নষ্ট করে দেয়। আর ভাঙচুর করার পর তপন সাহা বাড়ির বাড়ির টিন পাশের একটি ডোবা পেলে দেয়। ঘরের ভেড়ার গুলো গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীতে ফেলে দেয়।
বাড়ির মালিক তপন সাহা বলেন, জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন অন্যের জায়গা বা সরকারি খাস জমিতে কুড়ে ঘরে। ডিম বিক্রির টাকা জমিয়ে মধুমতি নদীর পাড়ে রবিউল বিশ্বাস ও কামাল বিশ্বাসের কাছ থেকে আড়াই কাটা জায়গা পৌনে চার লাখ টাকা দিয়ে জমি কেনেন তিনি। দুই ছেলে, এক মেয়ে, স্ত্রীকে সঙ্গে সেখানে থাকতেন তিনি।
তপন সাহা বলেন, ‘সাত মাসে আগে আমি ঘর তুলি ওই সময় আমি কোনো বাধা পাইনি। যে আমার যে ঘর ভাঙছে সে ঘর তোলার সময় আমার কাছে মিষ্টি খেয়েছে। তাঁর সাথে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’ তিনি বলেন, ‘ভাঙ্গার সময় মুজিবুর দারোগা উপস্থিত ছিলেন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি যে নতুন করে কিছু করব তা আমি পারব না।’
পরিবারটি এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন।
পুলিশ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে মুজিবুর রহমান নামে টুঙ্গিপাড়া থানার কর্তব্যরত এক এসআইয়ের (উপপরিদর্শক) জড়িত থাকার কথা বলছে এলাকাবাসী।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি একই উপজেলার শ্রীরামকান্দি গ্রামের কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে পৌনে চার লাখ টাকা দিয়ে জমি কেনেন। এরপর ওই জায়গায় একটা দো-চালা টিনের ঘর ও রান্না ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন।
তপন সাহার স্ত্রী কৃষ্ণা সাহা বলেন, ‘আমাকে ঘরের ভেতর বের থেকে করে দিলো, আমি ফোনটা দিয়ে বের হয়ে গেলাম। এর মধ্যে মজিবুর দারোগা ছিল। সে আমাকে পাগল বলেছিল। এর মধ্যে আমার ঘর থেকে সব লুটপাট করে নদীতে পেলে দিল। আর যা পেয়েছিলাম তা লুট করে নিয়ে গেছে। তখন আমি পাশে বাড়ি ঘরে ছিলাম। ওই ঘরের লোকজন আমাকে আমার বাচ্চাদের খাওয়া করাইছে।’
গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এ ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও আওয়ামী লীগের বিরোধিতাকারীরা এ ঘটিয়েছে। এরা আওয়ামী লীগের ছত্রছায়া থেকে নির্যাতন করেছেন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার ও পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। একইসঙ্গে জড়িতদের আটক করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাড়ির মালিক তপন সাহা ১২ জনকে আসামি করে টুঙ্গিপাড়া থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ এরই মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কোনো পুলিশ সদস্য এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃত্ততা থাকলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় পুলিশ।
থানার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।