সজীব হত্যা : এমপির বাসায় মীমাংসার প্রস্তাব!

খুলনার মুহাম্মদনগর এলাকায় ইমরান সজীব আকনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি যুবলীগ নেতা শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে তাঁর পরিবার।
আজ শুক্রবার দুপুরে পরিবারের পক্ষ থেকে করা এক সংবাদ সম্মেলনে নিহতের বাবা ও মামলার বাদী নজরুল ইসলাম আকন এই দাবি জানান। তিনি দাবি করেন, ‘ঘটনার পর রাতে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিজানুর রহমানের বাসায় আমাকে মীমাংসার কথা বলে ডেকে নেওয়া হয়েছিল এবং সেখানে যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আসামি হাফিজ উপস্থিত ছিলেন।’
এ ব্যাপারে জানতে আজ শুক্রবার বিকেলে সংসদ সদস্য মিজানুর রহমানের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
আজ খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সজীব হত্যা মামলার প্রধান আসামি যুবলীগ নেতা শেখ হাফিজুর রহমানের নাম এজাহারভুক্ত থাকায় অনেকে মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বলা হচ্ছে, ঘটনার দিন যুবলীগ নেতা হাফিজুর রহমান খুলনায় ছিলেন না।’
নজরুল ইসলাম ঘটনার রাতে ‘মীমাংসার’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘খুলনায় না থাকলে সেদিনই এমপির বাসায় উপস্থিত থাকে কীভাবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গল্লামারী এলাকায় দুটি মোটরসাইকেল তাঁর পিছু নেয়, পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায়।
নজরুল ইসলাম আকন বলেন, তিনি কোনোদিন ফ্রিডম পার্টি করেননি। সজীব হত্যা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে একটি মহল এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। বরং যুবলীগ নেতা শেখ হাফিজুর রহমানের বাবা শেখ তকিম একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি ছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর কারণে সে মামলা স্থগিত হয়ে যায়।
স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে নিহত ছেলেকে নিয়ে ‘বাণিজ্যের’ অভিযোগ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো বাবা সন্তানের লাশ নিয়ে বাণিজ্য করতে পারে? বিচার চাইতে আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আদালত হচ্ছে প্রত্যেকটি মানুষের বিবেক। নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।’
সংবাদ সম্মেলনে নিহত সজীবের মা, স্ত্রী, ভাই ও বোনরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়।
গত ১৯ জুন গল্লামারীর মুহাম্মদনগর এলাকায় ইমরান হোসেন সজীবকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সজীবের পরিবারের অভিযোগ, দুর্বৃত্তরা সজীবের কাটা হাত নিয়ে উল্লাস করে রাস্তায়।
এ ঘটনায় সজীবের বাবা নজরুল ইসলাম আকন বাদী হয়ে মহানগর যুবলীগের সদস্য শেখ হাফিজুর রহমানকে হুকুমের আসামিসহ মোট ১০ জনের নাম উল্লেখ করে হরিণটানা থানায় মামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরাও স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মী।
হাফিজুর রহমানকে হত্যা মামলার আসামি করায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক ও সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানান। এরপর যুবলীগের একটি অংশ পিকচার প্যালেস মোড় এলাকায় হাফিজুরকে হত্যা মামলা থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করে।
গত ২৪ জুন বিকেলে হাফিজের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদে গল্লামারী এলাকায় স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশের ডাক দেন।
পাশাপাশি একই স্থানে যুবলীগের আরেকটি অংশ ইমরান হোসেন সজীবের হত্যার বিচারের দাবিতে সমাবেশ আহ্বান করে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) ওই এলাকায় সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।